Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 2:12 pm

মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় তরুণদের প্রস্তুতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিসর দ্রুত আধুনিকায়ন হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এরই সঙ্গে সঙ্গে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও নতুনত্ব আনতে হবে। এ খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী তরুণদেরও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নতি করতে হবে। সেক্ষেত্রে গবেষকদের মলাটবদ্ধ জ্ঞান আর পেশাদার ব্যবস্থাপকদের অভিজ্ঞতার মধ্যে সমন্বয় সাধনের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সমন্বয়ে এগিয়ে আসা দরকার।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গতকাল ‘এইচআর এভিনিউ: দ্য ডন অব এইচআর রেভল্যুশন’ শীর্ষক সেমিনারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার নানা দিক এবং মুখ্য কর্মক্ষমতা সূচক (কেপিআই) নিয়ে আলোচনা করেন দেশের শীর্ষ মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞরা।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে বিএসএইচআরএমের প্রতিষ্ঠাতা ও আইসিডিডিআরবি’র প্রধান মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসাইন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রগ্রেসিভ ট্রেনিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েটসের (পিটিডিসিএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাশেকুর রহমান খান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এইচআরডি ইনস্টিটিউটের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ এ সোবহানী, বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন ফর লর্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বোল্ড) সভাপতি কাজী এম আহমেদ, নাভানা গ্রুপের এইচআর-প্রধান ইমরান বিন ফেরদৌস, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এমপ্লয়ি রিলেশন বিভাগের প্রধান মাসুদ ইবনে মাহবুব, ডরিন পাওয়ার লিমিটেডের এইচআর-প্রধান এসএম আহবাবুর রহমান, সুপারস্টার গ্রুপের মোহাম্মদ তানিম রহমান, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচআর বিভাগের প্রধান শাম্মী আক্তার, সিনিয়র লেকচারার শবনম মোস্তারী, সহযোগী অধ্যাপক নাঈম জালাল উদ্দিন আহমেদ, ধানমন্ডি ক্যাম্পাস কো-অর্ডিনেটর মো. জয়নাল আবেদিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বিভিন্ন খাতে এইচআর শিক্ষার্থীদের চাকরির সম্ভাবনা এবং কর্মক্ষেত্রের নানা রকম পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (বিএসএইচআরএম), এইচআর বিডি, লিম গ্লোবাল বাংলাদেশ ও আই-শার্প ডিজিটালের সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের গণমাধ্যম সহযোগী ছিল শেয়ার বিজ, ক্যাপিটাল এফএম ৯৪.৮ ও আরটিভি অনলাইন।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে শুধু কর্মী নিয়োগ আর ছাঁটাই হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। মূলত যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহযোগিতা করে এ বিভাগ। এজন্য শারীরিক, মানসিক দিকের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীর আত্মিক সম্পর্কের বিষয় নিয়েও এ বিভাগের কর্মকর্তাদের ভাবতে হবে।

গবেষণার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যান্ত্রিকীকরণ বাড়ছে। রোবটের ব্যবহার বাড়ছে। সুতরাং জ্ঞান, মুখস্থবিদ্যার মতো গুণাবলিগুলো কোনো কর্মীর জন্য যথেষ্ট নয়। এসব যোগ্যতা রোবটকেও দেওয়া যায়। এখন মূল্যায়ন করতে হবে আপনি একজন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠানকে কী মূল্য সংযোজন করছেন। বর্তমানে একদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ লোক পাচ্ছে না, অন্যদিকে অনেক লোক বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। দক্ষতা ও প্রয়োজনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে। এটি নিরসনের চেষ্টা খুবই প্রয়োজন। এদিকে কর্মক্ষেত্রে এখন আর ৯টা-৫টা ব্যবস্থা কার্যকর করা লাভজনক হচ্ছে না। কর্মীদের কাজের জন্য নিজস্ব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া আধুনিক ও ক্রমপরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

এজন্য মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ধারণাগুলোকে পুনর্গঠিত করা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন। এ সময় বক্তারা আরও বলেন, মুখ্য কর্মক্ষমতা সূচকসহ (কেপিআই) বিভিন্ন পদ্ধতিতে কর্মীদের দক্ষতা যাচাই করা হচ্ছে। কোম্পানির উন্নয়নের জন্য এটি করা হলেও কখনও কখনও এটি নেতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। এজন্য বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল স্থাপন করা দরকার। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতার সঙ্গে তত্ত্বের সমন্বয় এজন্য খুবই জরুরি। বর্তমানে বৈশ্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে তরুণ নেতৃত্ব বেড়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ৯৫ শতাংশ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী পদে ৩৫ বছরের কম বয়সীরা কাজ করছেন। কারণ বৃদ্ধরা প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। আমাদের দেশেও পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।