মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার: আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা ও উন্নয়নে বর্তমান সরকার সর্বতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠছে, সেখানে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার। বাংলাদেশে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে মানবাধিকার দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আনিসুল হক বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে

সরকারের অনেক বড় অর্জন সত্ত্বেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার হীন চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশের সংবিধান ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এ দুটির কোথাও অন্যের অধিকার হরণ করে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা নেইÑএ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ২০ অনুচ্ছেদে শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এ দুটি অনন্য দলিলের কোথাও বলা নেই রাস্তাঘাট বন্ধ করে, জনসাধারণের চলাচলের পথ রুন্ধ করে সভা-সমাবেশ করা যাবে।

মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আজকাল মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনাÑতা জানার আগেই অনেকে আমাদের মানবাধিকার সমন্ধে ছবক দিচ্ছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটলেও তারা মানবাধিকার রক্ষা দূরে থাক, এ বিষয়ে একটি টু শব্দও করেননি।

তিনি বলেন, যে বঙ্গবন্ধু তার সারাটা জীবন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধুকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা ছিল বিশ্বের ইতিহাসে ঘৃণ্যতম ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বীভৎসতা এত ভয়াবহ ছিল যে ইনডেমনিটি আইন করে দীর্ঘ ২১ বছর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল এবং বিশ্বের বড় বড় দেশ খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল। দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন খুনি এখনও কয়েকটি বড় দেশের আশ্রয়ে রয়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অনেকটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আনিসুল হক আরও বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করে এর অধীন শক্তিশালী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। সরকারের অব্যাহত সহযোগিতায় বর্তমানে এই কমিশনের এখতিয়ার ও কাজের পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। এটি এখন নারী, শিশু, দলিত, হিজড়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, মেহনতি মানুষ ও প্রবাসী শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে স্বল্প সময়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এশিয়া প্যাসিফিক ফোরামের সদস্য পদ লাভ করেছে এবং ‘বি’ ক্যাটেগরির স্ট্যাটাস অর্জন করেছে।

মন্ত্রী জানান, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় জবাবদিহির অংশ হিসেবে সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ছায়া প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে। দেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করার পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করছে। মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায় ও আদেশ দ্রুত কার্যকর করার যথাযথ পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে সরকার আরও অনেক আইন প্রণয়ন করেছে। বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের বিষয়টিও এখন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীন রয়েছে।

সরকারের সুনীতি ও দৃঢ় অবস্থানের কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বড় বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। দেশ থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয়েছে। মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছেন। মানবাধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ চারবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেছে, বলেন আইনমন্ত্রী।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মইনুল কবির প্রমুখ বক্তৃতা দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০