মানবিক কারণে এবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভোটদান: মোমেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবিক কারণেই বাংলাদেশ এবার জাতিসংঘে ইউক্রেনের তোলা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ প্রস্তাবে মানবিক কারণে নির্যাতিত ও আহতদের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যেহেতু আমরা চাই, নির্যাতিত লোকের মঙ্গল হোক, সে কারণে আমরা এই প্রস্তাবে ইয়েস করেছি।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

অন্যদের মধ্যে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যান্টন, জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেলেন জারভিস ও মুক্তিযুদ্ধ জাদঘুরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বক্তব্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সফরের আলোচনা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে এ সিদ্ধান্ত কি নাÑএমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, ওর জন্য হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘চাপ তো আমাদের কাছে অনেক আছে। কিন্তু চাপে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কখনও ভ্রুক্ষেপ করেন না। এটা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য যা যা করার, তিনি তা-ই করেন। কোনো চাপের বশবর্তী হয়ে শেখ হাসিনা কাজ করেন না। আপনারা নানা রকম চিন্তা, হইচই করেন, এগুলো অলীক। শেখ হাসিনা কোনো চাপে এগুলো দেননি। কারণ তিনি তার নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটের অবসানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রমের সুযোগ দিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব পাস হয়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের বিশেষ জরুরি অধিবেশনে ইউক্রেনের তোলা ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪০ দেশ।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে সাধারণ পরিষদে আরেকটি প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত ছিল বাংলাদেশ। তবে এবার ইউক্রেনের মানবিক সংকট অবসানের দাবির পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশও।

বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া সঙ্গে পেয়েছে বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া ও সিরিয়াকে। গত মাসের প্রস্তাবেরও বিপক্ষে ছিল এই পাঁচ দেশের অবস্থান।

ভারত, চীন ও পাকিস্তান আগের মতো এবারও প্রস্তাবের বিষয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছে। ১৪০ দেশের ভোটের পাস হওয়া প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে মোট ৩৮ দেশ। ফেব্রুয়ারির প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত দেশের সংখ্যা ছিল ৩৪টি।

এবারের প্রস্তাবের পক্ষে গিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হলো কি নাÑএমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘এটায় ভোট দেয়ার কারণ হচ্ছে মানবিক। আমরা পৃথিবীতে মানবিক দেশ হিসাবে পরিচিত। আমরা হিউম্যানিটারিয়ান ইস্যুর ক্ষেত্রে খুব সোচ্চার। সে কারণে আমরা এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছি।’

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তাবে ভোটদানের ব্যাখ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি মোমেন বলেন, ‘দুটো প্রস্তাব এসেছিলÑএকটি পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে, আরেকটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে। দুটোই হিউম্যানিটারিয়ান রেজুলিউশন মানুষের মঙ্গলের জন্য, আর যাতে যুদ্ধবিগ্রহ কমে। আমরা দুটোর পক্ষেই ইয়েস বলেছি। তবে যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকার রেজুলিউশনটা পরবর্তী সময়ে আর ভোটে দিতে পারেনি, কারণ তারা যথেষ্ট পরিমাণ সমর্থন পায়নি। এটার জন্য সাইডলাইনে পড়ে গেছে। আমরা একটা ভারসাম্য রক্ষা করেছি। এটাতে ভোট দেয়ার কারণ হচ্ছে মানবিক।’

ফেব্রুয়ারির জরুরি অধিবেশনে জাতিসংঘের পাস হওয়া প্রস্তাবে ভোট না দেয়ার কারণ আবার ব্যাখ্যা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার ভাষায় ওই প্রস্তাবটি ছিল ‘খুব একতরফা’। ‘সেখানে মোটামুটিভাবে রাশিয়াকে শুধু দোষারোপই করা হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ তো এক হাতে হয় না, একহাতে তালি বাজে না। কিন্তু অন্যপক্ষের নামই আসেনি। তো আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা অত্যন্ত পার্টিজান এবং এটাতে যুদ্ধ থামবে না। যুদ্ধ থামাতে হলে উভয়কে আন্তরিকতার সঙ্গে সামনে আসতে হবে। কিন্তু ওটাতে দোষারোপের মানসিকতা ছিল। আর যেহেতু আমরা কোনো দলে নেই।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০