Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:50 am

মানব পাচারে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনুন

বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ বেড়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে ‘ভূমধ্যসাগরে নিহত আট বাংলাদেশির লাশ দেশে’ শীর্ষক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের তথ্য, ভূমধ্যসাগরে নিহত আট বাংলাদেশির লাশ লিবিয়া থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এসভি৮০৮ বিমানযোগে দেশে ফিরছে। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি অভিবাসী দল নৌকায় করে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে গেলে মধ্যরাত সাড়ে ৪টায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাটিতে মোট ৫৩ জনের মধ্যে ৫২ জন যাত্রী ও এক চালক ছিলেন।

দেশি-বিদেশি মানব পাচার চক্রের প্রলোভনের কারণে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারভুক্ত তরুণদের ধারণা, কোনোভাবে ইউরোপের কোনো দেশ অথবা নিদেনপক্ষে মালয়েশিয়ার মতো কোনো দেশে প্রবেশ করতে পারলেই অর্থবিত্ত উপার্জন করা যাবে। কখনও নানা দেশ ঘুরে স্থলপথে মানব পাচারকারী চক্রের সহায়তায় প্রত্যাশিত দেশে ঢুকে এবং কখনও তারা একই উদ্দেশ্য সাধনে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথ  বেছে  নেয়। তিউনিসীয় উপকূলে যে আট বাংলাদেশির সাগরে ডুবে প্রাণহানি ঘটেছে, সেটি ওই মানব পাচারেরই অংশ।

গত কয়েক মাসে দেশে দেশে  প্রতারক চক্র কোন প্রক্রিয়ায় ফাঁদ সৃষ্টি করে বাংলাদেশি নিরীহ তরুণদের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায় এবং সেখানে ওই তরুণেরা মুত্তিপণসহ নানা ধরনের প্রতারণা ও দুর্ভোগে পড়েন। সে-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য কয়েক দফায় প্রকাশিত হয়েছে। বছর কয়েক আগে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় বা ইউএনওডিসি  বলেছে, বাংলাদেশের যত অসচ্ছল মানুষ উন্নত কর্মসংস্থানের খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমান, তাহাদের ৫১ শতাংশই পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েন।

মানব পাচারের ন্যায় ঘৃণ্য অপরাধের কারণে শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে সম্ভাবনাময় বৈদেশিক শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।

সবাই জানে আমরা জানি, পাচার চক্র শুধু একটি রুট ব্যবহার করে না। তারা বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে অভিবাসন ইচ্ছুকদের সুদান, লিবিয়া কিংবা অন্য কোনো দেশে পৌঁছে দেয়। আমরা যেমন বুঝতে পারি, আমাদের ইমিগ্রেশন শাখার কর্মকর্তারাও এটি বোঝেন। ইমিগ্রেশন অফিস হয়তো মনে করে, তারা যেভাবেই হোক কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি বা আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে বলে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে অবৈধ পথে অভিবাসনের গতি অব্যাহত রয়েছে। অনেকেই জমিজমা বিক্রি করে, সুদে টাকা নিয়ে কিংবা আত্মীয়স্বজনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অভিবাসনের অর্থ সংগ্রহ করে। আমরা মনে করি, পরিবার ও সমাজ সচেতন হলে এবং ইমিগ্রেশন শাখার কর্মকর্তারা দায়িত্বপরায়ণ ও সৎ হলে অনাকাক্সিক্ষত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা গেলে মানব পাচার কমবে বলেই প্রত্যাশা।