নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী নতুন অংশীদারিত্ব তৈরির স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্র দেশভিত্তিক মানব পাচার প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে মন্তব্য করে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস জানিয়েছে, ওই প্রতিবেদনকে ‘রাজনীতির হাতিয়ার’ হিসেবেও দেখা হয় না। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক মানব পাচার প্রতিবেদন প্রকাশ সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানানো হয়।
এক প্রশ্নোত্তরে বলা হয়, ‘মানব পাচারের ক্ষেত্রে ঘটনা কী ঘটছে সেটির ওপর আলোকপাত করতে এবং আরও ভালো কিছু করার জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীজনের মধ্যে সহায়তাকে উৎসাহিত করতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করি আমরা। এটাকে নতুন অংশীদারিত্ব তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি, দেশগুলোকে শাস্তি দেয়ার পথ হিসেবে নয়।’
দেশটির ২০০০ সালের ট্র্যাফিকিং ভিকটিমস প্রটেকশন আইনের (টিভিপিএ) বাধ্যবাধকতা মেনে প্রতিবছর মার্কিন কংগ্রেসে দেশভিত্তিক মানব পাচার প্রতিবেদন জমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। চলতি বছর ২২তম প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৮৮টি দেশ পৃথকভাবে থাকছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ কোন স্তরে থাকতে পারে এবং প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে ধারণা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মানব পাচার প্রতিবেদনে ‘টিয়ার ২ ওয়াচলিস্টে’ ছিল এবং কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় পরের দুই বছর দ্বিতীয় স্তরে উন্নীত হয়।
বার্ষিক এ প্রতিবেদনে প্রধানত তিনটি স্তরে দেশগুলোকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে যেসব দেশ মানব পাচার নির্মূলে টিভিপিএ’র সর্বনি¤œ মান পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে পারে, সেগুলোকে রাখা হয় প্রথম স্তরে। দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয় ওইসব দেশকে, যেগুলো টিভিপিএ’র সর্বনি¤œ মান পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি; তবে সেগুলো প্রতিপালনে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। আর টিভিপিএ’র সর্বনিন্ম মান রক্ষা করতে না পারা এবং এক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়া দেশগুলোকে রাখা হয় সর্বনিন্ম তৃতীয় স্তরে।
বিফ্রিংয়ে ঢাকায় দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের মাঝামাঝি আরেকটি তালিকায় ‘টিয়ার ২ ওয়াচলিস্টে’ কিছু দেশকে রাখা হয়। এতে পরিস্থিতি উন্নতি না করে ভুল দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং তৃতীয় ধাপে নেমে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যে থাকে এমন সব দেশকে রাখা হয়।
বিফ্রিংয়ে বলা হয়, মানবাধিকার প্রতিবেদন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও গুরুত্বের বিবেচনায় মানব পাচার প্রতিবেদন এগিয়ে থাকে। এটা একমাত্র প্রতিবেদন যেখানে দেশগুলোকে র্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হয় এবং এর ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার তারতম্য ঘটে থাকে।
দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, কংগ্রেসে প্রতিবেদন জমা হওয়ার কারণে তৃতীয় ধাপে থাকা দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘নন-হিউম্যানিটারিয়ান ও নন-ট্রেড’ বিষয়ক সহায়তার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আসতে পারে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা দেয় তা অতিমাত্রায় কমে আসতে পারে।
মানব পাচার প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে জানানো হয়, প্রতিবেদনে থাকা বেশিরভাগ তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারগুলোর কাছ থেকে নিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা দূতাবাস অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে ওই তথ্য মিলিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে এসব তথ্য পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা কাজ করি। এরপর বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গেও তথ্য সংগ্রহের জন্য কথা বলি।’
মিয়ানমারের নাগরিক হলেও প্রতিবেদনে পাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হচ্ছে কি নাÑএমন প্রশ্নে দূতাবাস কর্মকর্তারা বলেন, ‘সমস্যার পরিধি বা সংখ্যা নিয়ে প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করি না। বাংলাদেশ থেকে বা বাংলাদেশের দিকে কত মানুষ পাচারের শিকার হয়, তা নয়; বরং সমস্যা মোকাবিলায় সরকার কী করছে তা প্রতিবেদনে আসে। প্রতিবেদনে আমরা বলি, সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সরকারের করার জন্য আমাদের কী কী সুপারিশ আছে। রোহিঙ্গাদের পাচার মোকাবিলার জন্য আইওএমসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ প্রতিবেদনে আসে। আমরা যেহেতু সংখ্যার হিসাব করি না, সেহেতু রোহিঙ্গাদের সংখ্যার বিষয় এখানে প্রযোজ্য নয়।’
বিশ্বব্যাপী মানব পাচারের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এটি একটি বড় ইস্যু। আড়াই কোটি ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার হন। বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি ডলারের লেনদেন হয় এর মাধ্যমে।