মানসম্পন্ন ফিড তৈরিতে দরকার মানসম্মত সয়া প্রোটিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস উৎপাদনের জন্য মানসম্মত ফিড অপরিহার্য। অন্যদিকে ভালো মানের ফিডের উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে দরকার উন্নতমানের কাঁচামাল, বিশেষ করে সয়াবিন, সয়াবিন মিল ও ভুট্টা। বিশ্বের বেশকিছু দেশ সয়া প্রোটিন রপ্তানি করলেও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়া প্রোটিন মানের মাপকাঠিতে উন্নততর, নির্ভরযোগ্য ও টেকসই।

গতকাল শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে রাইট-টু-প্রোটিন ক্যাম্পেইন ও স্টেকহোল্ডার আলোচনা সভায় ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ মন্তব্য করেন। পোলট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এ ক্যাম্পেইন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বিপিআইসিসি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিআব) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, দেশের পোলট্রি, অ্যাকুয়া, ডেইরি ও গবাদি পশুখাদ্যের শতভাগ চাহিদা পূরণ করছে দেশীয় ফিড ইন্ডাস্ট্রি। বাংলাদেশে উৎপাদিত পোলট্রি ও ফিশ ফিড এখন ভারত ও নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। ফিডের মানের উৎকর্ষ, এফসিআর ও পারফরম্যান্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সয়া প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করা হয়।

খালেদ বলেন, মানসম্মত প্রোটিন পশুর স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য খরচ কমাতে সহায়তা করে। বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়া প্রোটিনের কদর রয়েছে, কারণ এতে প্রোটিন কনটেন্ট বেশি থাকে। তাছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন ও খনিজ। অন্যান্য দেশের সয়াবিনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়াবিনে আর্দ্রতা কম থাকে। সর্বোপরি এটি অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ইউএস গ্রেইন টার্মিনাল ও সাইলো নির্মাণের প্রস্তাব করেন খালেদ। তার ভাষায়, এর ফলে দ্রুত পরিসেবা নিশ্চিত হবে; টেনশনমুক্ত স্টোরেজ ও পোর্ট ডেমারেজের ঝুঁকি কমবে এবং ক্রেতাদের মাঝে আস্থা বাড়বে।

ইউএসএসইসি’র দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক কেভিন রোপকে বলেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তার জনগণের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটা প্রমাণিত যে, প্রোটিন মেধার বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশে এখনও প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটের মাঝে বসবাস করছে। সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর ও উচ্চমানের প্রোটিনের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

‘বাংলাদেশ প্রোটিন পারসেপশন স্টাডি’ শীর্ষক ইউএসএসইসি পরিচালিত একটি স্টাডির উল্লেখ করে, ইউএস সয়া সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড মার্কেটিং, দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রধান দিবা ইয়ানুলিস বলেন, বেশিরভাগ বাংলাদেশিই জানে না তার শরীরের জন্য ঠিক কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬২ শতাংশ ভোক্তা ডালজাতীয় খাদ্যকে প্রোটিনের বড় উৎস বলে মনে করেন। প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, প্রোটিনের চেয়ে ভিটামিন ও মিনারেলই বেশি দরকারি। তিনজন বাংলাদেশি ভোক্তার মধ্যে একজন (ভুলভাবে) বিশ্বাস করেন, প্রোটিন না খেলে স্বাস্থ্যের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই জানে না, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীর প্রোটিনের চাহিদা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি না কম। পুষ্টি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রোটিন-বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর তাগিদ দেন দিবা ইয়ানুলিস।

ইউএসএসইসি’র বাংলাদেশ টিম-লিড খবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, প্রোটিনের অধিকার নিশ্চিত করতে তার প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। প্রত্যেক সচেতন মানুষের উচিত এ প্রচারাভিযানকে সমর্থন করা। শুধু নিজেদের কথা ভাবলেই চলবে না। ভবিষ্যৎ প্রজš§কে মেধাবী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটা প্রোটিন জরুরি, তা জানাতে হবে এবং উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ প্রোটিনকে সুলভ ও সহজলভ্য করতে হবে।

ফিআব সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, এমবিএম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাংলাদেশে সয়াবিন মিলের কনজাম্পশন বেড়েছে। সয়াবিন মিলের মোট বার্ষিক চাহিদা ২.৫ থেকে ২.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ডলার সংকট ও সরকারি কিছু সিদ্ধান্তের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ফিড মিলার ও সয়া আমদানিকারকরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

বাংলাদেশি ক্রেতাদের জন্য বিশেষ দর, বন্দর ও সাইলো সুবিধা এবং জাম্বো ভ্যাসেলের জন্য আকর্ষণীয় ভাড়া দেয়া হলে ইউএস সয়াবিনের কদর আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন ফিড মিলাররা।

আলোচনা সভার সঞ্চালক ওয়ার্ল্ড’স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সিরাজুল হক বলেন, দেশ বছরে প্রায় ৭.৫ থেকে আট মিলিয়ন মেট্রিক টন ফিড উৎপাদন করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে সর্বোপরি সরকার ঘোষিত খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রোটিন কনজাম্পশন বাড়াতেই হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০