মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরের মনিরামপুরে উদ্যোক্তা হিসেবে মানসম্মত ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে সাড়া ফেলেছেন একদল কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রজনন বীজ বা মা বীজ সংগ্রহ করে তা দিয়ে নিজের ক্ষেত থেকেই এখন তারা বীজ তৈরি করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন। মনিরামপুরের কৃষকদের এ সফলতা দেখে জেলার অন্য এলাকার কৃষকরাও ধানের মানসম্মত বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ফসল উৎপাদনের যে কোনো প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নের মূলভিত্তি মানসম্মত প্রজনন বীজ বা মা বীজ। কিন্তু প্রতিবছর ধান চাষের উপযুক্ত সময়ে মানসম্মত বীজের অভাবে কৃষককে বেশ বেগ পেতে হয়। এছাড়া অনেক বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে কেনা পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ মানহীন ধানের বীজ প্যাকেটজাত করে কৃষকদের মাঝে চড়া দামে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। এতে কৃষক একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি কাক্সিক্ষত খাদ্যশস্য উৎপাদনও ব্যাহত হয়।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান, গম ও পাটবীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও ভালো মানের বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে যশোরের মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়নে কৃষকদল গঠন করে মানসম্মত এ ধান বীজ উৎপাদন করছেন একদল কৃষক।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, ‘কাজটি অনেক কঠিন হলেও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কৃষকরা দল গঠন করে নিজেদের ক্ষেত থেকে ধান বীজ উৎপাদন করছেন। এক্ষেত্রে কৃষককে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছি।’ তিনি বলেন, প্রতিবছর ধান চাষের উপযুক্ত মৌসুমে কৃষকের মাঝে বীজ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা থাকে। উৎপাদকদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে ধান বীজ কিনলেও মান না থাকায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে ভিত্তি বীজ সরবরাহ করে তাদের নিজস্ব ক্ষেত থেকে উৎপাদন করে বিক্রি করছেন তারা। ২০১৯ সাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হলেও এরই মধ্যে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।’
মানসম্মত ধান, গম ও পাটবীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মোহাম্মাদ সামিউর রহমান বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে শতভাগ স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখা হচ্ছে। বিএডিসিসহ ভালো কোম্পানিগুলো বীজ বাছাইয়ে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে, ঠিক তেমন পদ্ধতি অনুসরণ করছেন এখানকার কৃষকরা। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এ পদ্ধতি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’
কৃষকরা জানান, মানসম্মত ধানবীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির অনুসরণ করছেন তারা, যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বীজ নিয়ে সাড়া পড়েছে। মনিরামপুর উপজেলার লাউড়ী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রামে তাদের ১৫ জনের একটি কৃষকদল রয়েছে। ২০১৯ সালে তারা প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বীজ উৎপাদন শুরু করে। সেই বীজ নিয়ে এ বছর কৃষকরা ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। এ বছর তারা দুই টন ধান বীজ সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো প্যাকেট করে তা কৃষকের মাঝে সরবরাহ করছেন। প্রতি ১০ কেজি বস্তার ধানবীজ ৫০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘একসময় ধানবীজের জন্য কৃষকের মাঝে হাহাকার শুরু হলেও এখন তারা নিজেরাই ধানবীজ তৈরি করছেন। এটি কৃষি বিভাগের জন্য ইতিবাচক দিক।’ ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে মানসম্মত এ ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আগামীতে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।