Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:46 pm

মানসিক অবসাদ ও মুক্তির উপায়

শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে নেতিবাচক পরিবর্তনই মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ হলো এক ধরনের মানসিক রোগ। এর অবস্থা মৃদু থেকে প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। বর্তমানে আমাদের জীবন কাটে নানান চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে। অফিসের নানা কাজের চাপ, পারিবারিক টানাপড়েন, ব্যর্থতা, প্রিয়জনের প্রয়াণ প্রভৃতি থেকে অবসাদের জš§ হয়। অনেকে টেনশন, দুঃখ, যন্ত্রণা প্রভৃতিগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারলেও কোনো কোনো মানুষ এগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারে না। তারাই এই মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়।

বর্তমান সময়ে অনেক তরুণরা মানসিক অবসাদে ভুগছে। এর ক্ষতি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। মানুষ যখনই তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে অন্য পথে দৌড়ায় তখনই সে নানা ধরনের অবসাদে ভুগতে থাকে। তার জীবন ও সময় বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভোগে মানুষ বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো রোমহর্ষক রাস্তা। যেকোনো মানুষকে মানসিক অবসাদ ঘিরে ফেললে তা নিঃশব্দে ঘাতক হিসেবে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। মানসিক অবসাদ মনে দুঃখ নিয়ে আসে। নিজের ভালোলাগার কাজগুলোও আর বিশেষ ভালো লাগে না। দিনের পর দিন যদি সমস্ত কাজে অনীহা দেখা দেয় তবে একজন মানুষ মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

মানুষের জীবনে নানা ধরনের মুসিবত আসবে। সব কিছু নিজের মনমতো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্যেকের জীবনেই যখন তখন হানা দিতে পারে অবসাদ। নিত্যপণ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চরম অর্থ সংকট, পেশাগত অনিশ্চয়তা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের দূরত্ব ইত্যাদি নানা কারণে মন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। কখনও কাজের চাপে, কখনও চাকরির সমস্যা, কখনও সাংসারিক জীবনে অশান্তির কারণ, কখনও পরীক্ষায় ভালো ফল না হওয়া, কখনও অন্যদের থেকে কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার ভয় আমাদের অজান্তেই মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। জীবনের যে কোনো মানসিক চাপের কারণে আমাদের ঘিরে ধরতে পারে এই অবসাদ। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা একাকিত্বে ভোগেন বেশির ভাগ সময়। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবসাদ এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যে আক্রান্ত ব্যক্তি যেকোনো চরম সিদ্ধান্ত মুহূর্তেই নিয়ে ফেলেন। একাকিত্ব, মানসিক যন্ত্রণা, দুঃখ, হতাশা ধীরে ধীরে অবসাদের রূপ নেয়। মনোবিদদের মতে, সাফল্যের শীর্ষে থাকা কোনো ব্যক্তিও একাকিত্ব বা ঈর্ষার কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

দৈহিক ও মানসিক শক্তি ক্ষয়ের ফলেই অবসাদের সৃষ্টি হয়। তাই দেহ ও মনের সুস্থতা ও সক্রিয়তা আনয়নের মাধ্যমে অবসাদ দূর করা সম্ভব। অবসাদ দূরীকরণের জন্য আমরা কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করতে পারি। জ্যোতিষ শাস্ত্রের মতে, যদি মন অশান্ত থাকে, মাথায় চিন্তা থাকে তবে সকালে ওঠে ১৫ মিনিট মর্নিং ওয়াক করুন, যা মনকে অনেক বেশি ফুরফুরে করে তোলে। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা বাইরে যেকোনো জায়গায় হাঁটুন। মর্নিং ওয়াকের পর স্নান করুন। এরপর কিছুক্ষণ প্রার্থনা করুন। এছাড়া সাদা জিনিসের ব্যবহার বাড়াতে পারেন। সাদা পোশাক, দেয়ালে সাদা রং বা যেকোনো সাদা জিনিসের ব্যবহার করুন। সাদা রং মনের শান্তি বৃদ্ধিতে খুব লাভজনক। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। জ্যোতিষ মতে, এ উপায়গুলো মেনে চললে মনের শান্তি বাড়বে, অবসাদ দূর হবে। এই উপায় প্রয়োগ করে প্রচুর মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগীরা অবসাদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছেন বলে দাবি করা হয়। গাছের পরিচর্যা, যোগাসন, ছবি আঁকা, ভ্রমণ, বই পড়া, সাংগঠনিক কাজে সময় দেয়া, নানান সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, নিয়মিত ধর্ম চর্চা করা ইত্যাদির মাধ্যমে অবসাদ কাটানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন মনোবিদরা। মানসিক চাপ ও অবসাদ কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে। অবসাদ, মানসিক চাপ কমানোর বেশ কিছু ওষুধও রয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে খাওয়া যেতে পারে।

জহুরুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়