মানসিক রোগ বিষয়ে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও সচেতন নয়। গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘মানসিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ বক্তব্যেরই সত্যতা মেলে। প্রতিবেদনটিতে জানা যায়, বাংলাদেশে কোনো না কোনো ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। আর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩২ লাখেরও বেশি, যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে আট শতাংশ। এর মধ্যে চার দশমিক এক শতাংশ বিষাদগ্রস্ততায় ভুগছে আর উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে চার দশমিক চার শতাংশ।
আমাদের দেশে মানসিক রোগকে প্রায়ই গুরুত্ব না দেওয়ার একটা মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। গ্রামগঞ্জে মানসিক রোগকে ‘জিনের আছর’ বলে বিবেচনা করে ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থা হয়। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সঙ্গে নিজের সমস্যা ভাগ করে নিতে সংকোচবোধ করেন। তার পরিবারও বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চায়। তাদের একটি অংশ আবার বিষয়টিতে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো রোগীকেই চাপ প্রয়োগ করে সুস্থ করে তুলতে চায়, যা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে একেবারেই অনুচিত। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরীর মতে, সামাজিক সচেতনতার অভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত হাজারো রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্নই হন না। অর্থাৎ দেশে মানসিক রোগে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকদের মতে, একুশ শতকের ক্রমবর্ধমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা এবং অতিগতিশীল জীবনযাপনে অভ্যস্ততা মানুষকে ক্রমান্বয়ে নানাবিধ মানসিক চাপে ফেলে দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে শিশু-কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন মানসিক রোগের শিকার হচ্ছে। আর্থসামাজিক বাস্তবতা, পারিবারিক অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা থেকে শুরু করে পরীক্ষা বা লেখাপড়ার চাপ, প্রযুক্তিতে অতি-আসক্তি, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ মানসিক রোগের জন্ম দিচ্ছে যা এক সময় বিষাদগ্রস্ততার দিকে মোড় নেয়।
২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা। শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রচলন থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এ ধারণা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। শরীরের মতো মনও যে স্বাস্থ্যের অংশ; এরও যে রোগ হতে পারে সে বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা জরুরি। মানসিক রোগে আক্রান্তকে ‘পাগল’ বলে হেয় প্রতিপন্ন করার চর্চা থেকেও বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। মানসিক রোগের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:56 am
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হোক সবাই
সম্পাদকীয় ♦ প্রকাশ: