মানি চেঞ্জারদের সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় ডলার বিক্রি করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে ডলার কিনেছিল। এতেই গত মঙ্গলবার ডলার দর এক লাফে ১২-১৪ টাকা বেড়ে ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় উঠেছিল। ব্যাংকের ডলার রেট বৃদ্ধির কারণে খোলাবাজারেও দাম বেড়েছিল। গত বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে ১২৭ থেকে ১২৮ টাকায় ডলার বেচাকেনা হয়েছিল, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ।

এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার ডলারের দাম ঠিক করে দেয়া দুই সংগঠন ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে দুই সংগঠনের নির্ধারিত দরের বেশি ডলার বেচাকেনা না করার নির্দেশ দেয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকে ডলার কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা দিতে পারবে। আর বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা। কেনার চেয়ে বিক্রির পার্থক্য কোনোমতেই দেড় টাকার বেশি হবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক মো. সরোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম ইসমাইল হক ও মহাসচিব হেলাল সিকদারসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, এভাবে দল বেঁধে দিলে মানি চেঞ্জারগুলো ডলার পাবে না। কারণ যে দরে কিনতে বলা হয়, সে দরে ডলার বাজারে পাওয়া যায় না। আর ব্যাংকও এ দামে ডলার বিক্রি করে না। তাই এভাবে বেঁধে দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেলাল সিকদার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত রেটের চেয়ে এক টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনতে পারব। আর বিক্রির ক্ষেত্রে এ দর হবে সর্বোচ্চ দেড় টাকা।

এদিকে গতকাল বিদেশি এক্সেচেঞ্জ হাউসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসকে ব্যাংকের কাছে রেমিট্যান্স বিক্রির ক্ষেত্রে এবিবি ও বাফেদার রেট মেনে চলতে বলা হয়। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, ইন্সট্যান্ট ক্যাশ, মানিগ্রাম, স্মল ওয়ার্ল্ড, ট্রান্সফাস্ট, মার্চেন্টেড এশিয়া, রিয়া মানি ট্রান্সফার, প্লাসিড এবং এনইসি মানি ট্রান্সফারসহ শীর্ষ ১০টি বৈদেশিক বিনিময় সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক আগের দেনা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে এলসি খোলায় অধিক সতর্কতা দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সে ডলার কেনার দর তদারকিতে কিছুটা শিথিলতা দেখিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংক প্রণোদনা ইচ্ছেমতো দেয়ার সুযোগ দিয়েছিল। এ খবরে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলারের দাম ১২-১৪ টাকা বাড়িয়ে দেয়। আর দেশের ব্যাংকগুলো তা প্রতিযোগিতা করে কিনছেও। এতেই এক লাফে ডলারের দর বেড়ে গত সপ্তাহে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা উঠে যায়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আবার অস্থিরতা শুরু হতে থাকে। এক দিনের মাথায় খোলা বাজারেও ডলার দর বেড়ে যায়। গত সপ্তাহের শেষের দিকে খোলাবাজারে ১২৭ থেকে ১২৮ টাকায় ডলার বিক্রি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ডলার দাম আর বাড়ানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবিবি ও বাফেদা। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেয়া যাবে আগের মতোই ১১১ টাকায়। তবে প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা অফার করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুই সংগঠনের সঙ্গে বসে। সেখানে নির্দেশনা দেয়া হয়Ñএবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দরের বেশি ডলার বেচাকেনা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, একেক ব্যাংক একেক রকম দর দেয়ার পর বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো বলেছে, সবাই মিলে তারা ১১৬ টাকার মধ্যে থাকবে। নির্ধারিত দরের চেয়ে কেউ বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০