আজ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোহান রাজিব
শেয়ার বিজ: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি সম্পর্কে কিছু বলুন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি যাত্রা শুরু করেছে ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক লিমিটেড নামে, যা ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়ে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আপনারা জানেন, একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকিং খাতের অন্যতম ইসলামি ব্যাংক হিসেবে সেই অর্থনৈতিক যুদ্ধে আমরাও শামিল রয়েছি অগ্রসর সৈনিকের মতো। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সক্রিয় সর্মথন ও সহযোগিতায় ২০২৩ সালেও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি তার অগ্রযাত্রা বরাবরের মতো অব্যাহত রেখেছে।
শেয়ার বিজ: দেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আপনার ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি কেমন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: মহান আল্লাহর অশেষ রহমত, দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত, সম্মানিত গ্রাহকদের সুদৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস এবং আপনাদেরসহ সবার সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি. তার অগ্রযাত্রা বরাবরের মতো অব্যাহত রেখেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ব্যাংকের অর্জন সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে এবং সব কর্মকাণ্ডে মানসম্মত উৎকর্ষ সাধনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং শর্ট টার্মে ‘ঝঞ-২’ এবং লং টার্মে ‘অ+’ যা ব্যাংকের দৃঢ় ভিত্তির অন্যতম পরিচায়ক।
শেয়ার বিজ: ২৪ বছরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির সবচেয়ে বড় অর্জন কী বলে মনে করেন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি গুটি গুটি পায়ে তার যাত্রা শুরু করেছে প্রায় দুই যুগ আগে। এই দীর্ঘ পথচলায় আমি মনে করি আমাদের সব থেকে বড় অর্জনই হচ্ছে আমাদের সম্মানিত গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে নিরন্তন পথচলায় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। আলহামদুলিল্লাহ সম্মানিত গ্রাহকদের এ আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণœ রাখার ও সৃজনশীল ব্যাংকিং সেবার মানোয়ন্ননে আমরাও সদা প্রস্তুত রয়েছি সততা, দক্ষ মানব সম্পদ, কঠোর পরিশ্রম ও শরিয়াহ পরিপালনে আপসহীন নীতি নিয়ে। ২৪ বছেেরর পথযাত্রায় অসংখ্য অর্জনের মধ্যে এই ব্যাংকটিকে দেশের অন্যতম সেরা ইসলামি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।
শেয়ার বিজ: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের কতটা আস্থা অর্জন করেছে?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, বর্তমানে আমানত সংগ্রহের দিক থেকে দেশের সব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। জনগণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমারা প্রতিনিয়ত আমাদের গ্রাহকদের জন্য নিয়ে আসছি নিত্য নতুন আমানত ও বিনিয়োগ প্রকল্প। জনসাধারণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য সারাদেশে ২০৪টি পূর্ণাঙ্গ শাখা, ১৭০টি উপশাখা, ৯৬টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দেশব্যাপী ২৪৬টিরও অধিক নিজস্ব এটিএম ও সিআরএম নেটওয়ার্ক নিয়ে তাদের পাশে রয়েছে ফার্র্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। ২০২২ সাল শেষেও আমাদের মোট আমানত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিলাম, যা সম্মানিত গ্রাহকদের আস্থা এবং ব্যাংকের সুদৃঢ় ভিত্তির প্রতিফলন।
শেয়ার বিজ: আমানত ও বিনিয়োগ বাড়াতে আপনারা নতুন কী পণ্য এনেছেন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, ২০২৩ সালে আমরা আমাদের সম্মানিত গ্রাহকদের সুবিধার্থে বিশেষ সুবিধাসংবলিত ও মুনাফার নতুন ৫টি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট নিয়ে এসেছি। এগুলো হলো: ‘এফএসআইবিএল স্মার্ট অ্যাকাউন্ট’, মুদারাবা ‘এহসান’, মেয়াদি হিসাব ‘এফএসআইবিএল সেঞ্চুরি’, দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প ‘সামানিয়া’ এবং মুদারাবা মাসিক আমানত প্রকল্প ‘দুর্বার’।
অতি সম্প্রতি আমরা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও আমাদের সম্মানিত গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে আমাদের ব্যাংকের ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ২টি প্রোডাক্টস চালু করতে যাচ্ছি। এগুলো হলো ‘উৎসব ২৪’ যার বার্ষিক সম্ভাব্য মুনাফা হবে ১ হাজার ২৪ টাকা, যা দেশব্যাপী গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হবে বলে আশা রাখছি। অপরটি হলো মুদারাবা স্মার্ট আমানত দ্বিগুণ প্রকল্প, যা একজন আমানতকারীকে সর্বনি¤œ ১ লাখ টাকা বা তার গুণিতক পরিমাণে মাত্র ৫ বছর ৬ মাসে আমানতের দ্বিগুণ (সম্ভাব্য) রিটার্ন প্রদান করবে।
এছাড়া ২০২২ সালেও গ্রাহকদের সুবিধার্থে নতুন কিছু ডিপোজিট স্কিম নিয়ে এসেছে যেমন: চাকরিজীবীদের জন্য অবসর সময়ের সুরক্ষায় ‘সঞ্চয়ে সুখ’, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাসিক সঞ্চয় স্কিম ‘মার্চেন্ট’ এবং সীমিত সময়ের জন্য গ্রাহকদের আকর্ষণীয় মুনাফা প্রদানে নিয়ে এসেছে ‘উৎসব ২৪’ যা দেশব্যাপী গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হবে বলে আশা রাখছি।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি. দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনিয়োগ সুবিধা দিতে নতুন কিছু ইনভেস্টমেন্ট স্কিম নিয়ে এসেছে যেমন: মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্যে ‘স্বাবলম্বী’, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ‘প্রচেষ্টা’, গ্রামীণ কৃষি জনপদের জন্য ‘সোনালি স্বপ্ন’ এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অর্থায়নে নিয়ে এসেছে ‘উদ্যমী’।
শেয়ার বিজ: গ্রাহকসেবা বাড়াতে আপনার ব্যাংক কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি. তার ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মকে আরও সম্প্রসারিত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমাদের ক্যাশলেস বা লেস-ক্যাশ ব্যাংকিংসেবা এখন দেশের সব প্রান্তে সহজে ও নিরাপদে কেশলেস লেনদেন নিশ্চিত করছে। যেমনÑ
এফএসআইবিএল ‘ক্লাউড অ্যাপ’-এর ফ্রিডম ফিচারের মাধ্যমে একজন গ্রাহক ঘরে বসেই ই-কেওয়াইসি ফরম পূরণসহ নিজেই নিজের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এছাড়া আমাদের এই অ্যাপস ব্যবহার করে সকল প্রকার মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো গ্রহণ করা যায়, যেমন ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’Ñএ ব্যালেন্স ট্রান্সফার; ডিপিডিসি, ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা বিলসহ প্রায় সকল প্রকার ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করা যায়।
জনসাধারণের দোরগোড়ায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা নিয়ে আসেছি ‘ফার্স্ট ক্যাশ’। দেশে প্রচলিত অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সমন্বয়ে সব মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে হাজির হয়েছে ‘ফার্স্ট ক্যাশ’।
দেশের জনসাধারণকে সহজে ও স্মার্টলি ব্যাংকিং সেবা দিতে আমরা নিয়ে আসছি অত্যাধুনিক ‘ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা ডিএফএস’।
এছাড়া, আমাদের ভিসা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সকল প্রকার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই কার্ডধারীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট সুবিধা পেয়ে থাকেন।
আমাদের সিআরএম মেশিনের মাধ্যমে গ্রাহকগণ একই মেশিনে দ্রুততম সময়ে ক্যাশ জমা ও উত্তোলন করতে পারেন। এছাড়া নানাবিধ সময়োপযোগী সেবা প্রদানের মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে সবসময় বদ্ধপরিকর।
শেয়ার বিজ: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের কী অবস্থা? খেলাপি ঋণ আদায়ে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: আমরা সবাই অবগত যে, কভিডাকালীন ও তার পরবর্তী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সকল বিরূপ পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী ঋণের যথাসময়ে পরিশোধকে বিলম্বিত করছে। বাংলাদেশে আমাদের ব্যাংক খাতও একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রস খেলাপি ঋণের পরিমাণ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
যদিও গত বছর আমাদের ব্যাংককে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণের প্রবণতা দেখতে হয়েছিল, কিন্তু এখন আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে খেলাপি ঋণ ফলো-আপ করছি। এছাড়া, খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, ঋণের সময় বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন আনুযায়ী খেলাপি হওয়ার মেয়াদ ২ বছর হতে ৫ বছরে নির্ধারণসহ নিবিড় মনিটরিং ও রিকভারি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের এই ধারাবাহিক মনিটরিং ও রিকভারি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অচিরেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হব ইনশাল্লাহ।
শেয়ার বিজ: আমদানি–রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির অবস্থা কেমন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২,১২৪ কোটি টাকা। আমদানি বাণিজ্যের প্রধান খাতগুলো ছিল চিনি, ভোজ্যতেল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, তুলা, ফেব্রিক্স ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি। অন্যদিকে চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি বাণিজ্যে সর্বমোট প্রায় ২ হাজার ৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার রপ্তানি দলিল সফলতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান খাতগুলো ছিল তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, প্রক্রিয়াজাত চামড়ার পণ্য, কৃষি পণ্য প্রভৃতি। আবার ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অন্যতম ব্যাংক হিসেবে আমরা গ্রাহকদের দেশে বৈধভাবে পরিচালিত প্রায় সব শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, এক্সপ্রেস মানি, প্লাসিড এন কে করপোরেশন, ট্রান্সফাস্ট, রিয়া মানি ট্রান্সফার, প্রভু মানি ট্রান্সফার প্রভৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন রেমিট্যান্স সেবা প্রদান করে থাকি, যার মাধ্যমে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ খুব সহজেই তাদের প্রিয়জনের কাছে পাঠাতে পারেন। এছাড়া বৈধ পথে অর্থ প্রেরণের জন্য সরকার ঘোষিত ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালে আমরা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ফরেন রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছি।
শেয়ার বিজ: বর্তমানে ডলার নিয়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এটা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্ব আজ টালমাটাল। বিশ্বব্যাপী তথা বাংলাদেশের ডলার সংকটের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মোটদাগে বলতে গেলে আমদানি-রপ্তানি ঘাটতি, রাশিয়া-ইউেেক্রন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ সাময়িক কমে যাওয়া প্রভৃতি বর্তমান ডলার সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। ফলে সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
এ সংকট উত্তরণে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের সমর্থন স্বরূপ বিলাস বহুল দ্রব্যের আমদানি ঋণ বহুলাংশে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহƒত ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্রের ন্যূনতম মার্জিন ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংকের নির্বাহী ও কর্মকর্তাদের বিদেশ গমনে নিরুৎসাহিত করতে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। প্রবাসী ভাইদের কষ্টার্জিত আয় বৈধ চ্যানেলে প্রেরণে উৎসাহিত করার জন্য প্রতি লাখে নগদ প্রণোদনা দুই হাজার ৫০০ টাকা প্রদান অব্যাহত রেখেছি এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত আমাদের শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আন্তরিক সেবার মাধ্যমে তা প্রবাসী ভাইদের নিকটাত্মীয়দের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
শেয়ার বিজ: দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থা সম্পর্কে আপনি কিছু বলেবেন?
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী: অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণ হলো ব্যাংক ব্যবস্থাপনা। এ ব্যবস্থাপনার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো প্রত্যক্ষভাবে অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। কভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক ও আর্থিক পুনরুদ্ধারেও ব্যাংকিং খাতের সুসংগঠিত কার্যপ্রস্তুতি প্রয়োজন। আমি আপনাদের এটা জানাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, আমাদের ব্যাংক সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবসা এবং প্রকৃত অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে এসব স্বার্থের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ২০২১-২২ সালে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের আমানত ও বিনিয়োগে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা এ বছরেও অব্যাহত রয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও শৃঙ্খলিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দ্বারা ব্যাংকগুলো গ্রাহক ও সেবা বাড়ানো সহজতর হয়েছে। যদি খেলাপি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকিং খাতের সব দুরাশা দূর হয়ে যাবে।