মামলার অবসানে বিএটিবিসিতে আগ্রহ বিনিয়োগকারীদের

শেখ আবু তালেব: এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকার কর-সংক্রান্ত মামলায় সর্বোচ্চ আদালতেও রায় পক্ষে পেয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি)। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে কোম্পানিটি। এদিকে কয়েক বছরে ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ায় আগামী ডিভিডেন্ডে চমক থাকছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

এমন খবর ছড়িয়ে পুঁজিবাজারের সর্বত্র। এতেই গত কয়েক দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজার মূল্যে উত্থান হতে শুরু করেছে। মাত্র তিন কার্যদিবসেই শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়েছে ২২ টাকা ৭০ পয়সা। গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের কয়েক দিনের লেনদেনে পতন হয়েছিল শেয়ারটির দরে। এখন আবার উত্থানের দিকে রয়েছে।

বিনিয়োগকারী, কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে এমনটি।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) রিট্রোসপেক্টিভ ভ্যাট ও এসডি হিসাবে অতিরিক্ত এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা দাবি করে বিএটিবিসির কাছে। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা না হওয়ায় বিষয়টি উচ্চ আদালতে নিয়ে যায় বিএটিবিসি। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্টে এনবিআরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দাখিল করে বিএটিবিসি। উচ্চ আদালতের অ্যাপিলেট ডিভিশন বিএটিবিসির পক্ষে রায় দেয়। সেই রায় রিভিউয়ের আবেদন করে এনবিআর। সেই রিভিউ শেষ পর্যন্ত বিএটিবিসির পক্ষে যায়। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জানায় গত ২ ডিসেম্বর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএটিবিসি কোম্পানির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘কোম্পানির ব্রিস্টল ও পাইলট ব্র্যান্ডের সিগারেটের ওপর রিট্রোসপেক্টিভ ভ্যাট ও এসডি দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পণ্যের বা যেকোনো সিগারেটের দর নির্ধারণের আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য পণ্যের মান, উপকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও বিপণন বিবরণ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়Ñকোন ব্র্যান্ডের সিগারেট কত দামে বিক্রি করা হবে। এর চেয়ে কম বা বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। কিন্তু কোম্পানির কাছে অতিরিক্ত কর দাবি করা হয়েছিল এ দাবি করে যে, সিগারেটের দাম আরও বেশি হতে পারত।’

জানা গেছে, এখানেই বিপত্তি বেধে যায় দুই পক্ষের মধ্যে। আইন ও আন্তর্জাতিক হিসাব মানমতে, এর কোনো সুযোগ নেই। দর নির্ধারণের পরই নির্ধারিত হারে ভ্যাট ও এসডি যোগ হয়। বিষয়টি আদালতে গিয়ে নিষ্পত্তি হয়।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ আদালতের এমন রায়ে আশাবাদী হয়েছে বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোও। অপরদিকে রিট্রোসপেক্টিভ ভ্যাট বা এসডি ধরার বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায়।

সূত্র জানিয়েছে, শুরু থেকেই বিএটিবিসির বিশ্বাস ছিল এনবিআরের এ দাবিটি যৌক্তিক নয়। এজন্য এর বিপরীতে কোনো অর্থও প্রভিশন আকারে পৃথক করে রাখেনি। শুধু ডিসক্লোজার বা ঘোষণা দিয়েছে মাত্র।

ফলে কোম্পানিকে এখন আর কোনো অর্থও পৃথকভাবে রাখতে হবে না। রায় পক্ষে হওয়ায় বিষয়টিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তারা। এ খবরে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসা, আয় ও নগদ টাকার প্রবাহ বেড়েছে বিএটিবিসির।

আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দিনটিতে ২০২১ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিবেদন অনুমোদন হলেই ডিভিডেন্ডের ঘোষণা আসবে। এতে নতুন কোনো চমক থাকতে পারে। এজন্যই বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারদর। ২০২০ সালের জন্য অন্তর্বর্তী মিলিয়ে ৮০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল বিএটিবিসি। এর মধ্যে ২০০ শতাংশ ছিল বোনাস।

এদিকে সর্বশেষ তিন প্রান্তিকের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির আয় হয়েছে ২৪ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, আগের হিসাববছরের আলোচিত সময়ে যা ছিল ২০ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। আগের চেয়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে চার হাজার ৬৩ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তিন প্রান্তিকে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল এক হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী আলোচিত সময়ে ছিল ৮৭২ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০