নিজস্ব প্রতিবেদক: নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার দিক থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, সরকার বারবার বলছে, সব পর্যায় থেকে বলছে, এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করল, নাকি শ্রমিক করল? এ জবাবটা আমাকে দেন।’
গতকাল রোববার কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে খালাস ও জামিন চাইতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইউনূস। শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার রায়ে ছয় মাসের সাজার বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে খালাস চেয়ে আপিল করেন তিনি।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন রাখেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর তো সরকারি, সরকারের অধীন। শ্রমিক তো কোনো মামলা করেনি, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) বলেন। এটা তো মিথ্যা কথা।’
এর আগে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গ্রামীণ ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা তিনি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
রোববার শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে চারজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এমএ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ আদেশ দেন।
আপিল শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ তারিখ ধার্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।
ড. ইউনূসসহ চারজন গতকাল সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসেন। তারা এই মামলায় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের দেয়া সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। একই সঙ্গে তারা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। মামলায় ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয়নি।