শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনে আইফোনের চাহিদা কমে যাওয়ার বিষয়টি গোপন করে শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে ৪৯০ মিলিয়ন বা ৪৯ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। খবর: রয়টার্স
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডের ফেডারেল কোর্টে মামলার প্রাথমিক নিষ্পত্তি হয়েছে এবং এতে বিচারক ইভোন গঞ্জালেজ রজার্সের অনুমোদন প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য উত্তেজনাকে দায়ী করে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি অ্যাপলের অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় বলা হয়, আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ত্রৈমাসিক আয় ৯ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি ডলার পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর কুক বিনিয়োগকারীদের বলেন, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া ও তুরস্কের মতো যেসব দেশে মুদ্রার মান দুর্বল হয়েছে, সেসব দেশে অ্যাপল আইফোন বিক্রিতে চাপে পড়েছিল। তবে আমি চীনকে সেই ক্যাটেগরিতে রাখব না। প্রসঙ্গত অ্যাপলের অন্যতম বড় বাজার চীনে।
এর পরদিন অ্যাপলের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ পড়ে যায়। ফলে বাজারমূল্য ৭৪ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার কমে যায়। ২০০৭ সালে অ্যাপল বাজারে আসার পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে তাদের আয়। এর কয়েকদিন পর অ্যাপল সরবরাহকারীদের উৎপাদন কমানোর কথা জানায়।
এদিকে মামলা নিষ্পত্তির রায়ের বিষয়ে অ্যাপল এবং এর আইনজীবীরা কোনো মন্তব্য করেনি। আদালতের কাগজপত্রে দেখা গেছে, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংস্থা কুপারটিনো এতে নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে। তবে তারা মামলা মোকদ্দমার ব্যয় এবং বিভ্রান্তি এড়াতে নিষ্পত্তি করেছে।
শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধিত্বকারী রবিনস গেলার রুডম্যান অ্যান্ড ডাউডের অংশীদার শন উইলিয়ামস এটিকে একটি ‘অসামান্য ফল’ বলে অভিহিত করেছেন। কুকের মন্তব্য এবং আয়ের পূর্বাভাসের মধ্যবর্তী দুই মাসে যেসব বিনিয়োগকারী অ্যাপলের শেয়ার কিনেছিলেন তাদের মধ্যে এই অর্থ নিষ্পত্তি হবে। কয়েক হাজার শেয়ারহোল্ডার ২০১৮ সালের শেষের দিকে অ্যাপলের শেয়ার কিনেছিলেন। তাদের মধ্যে এই অর্থ বণ্টন করা হবে।
সর্বশেষ অর্থবছরে অ্যাপলের নিট আয় হয়েছে ৯৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এ হিসেবে বর্তমান মামলা নিষ্পত্তির ৪৯ কোটি গত অর্থবছরের মাত্র ১ শতাংশ। এ কারণে বলা হচ্ছে, অ্যাপলের শেয়ারহোল্ডাররা আরও ধনী হচ্ছেন। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কুকের মন্তব্যের পরবর্তী সময়ে চারগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে শেয়ারহোল্ডারদের আয়ের পরিমাণ অতিরিক্ত ২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছরের জুনে রজার্স মামলাটি খারিজ করতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অ্যাপল জানত যে চীনের অর্থনীতি ধীরগতির হয়ে যাচ্ছে এবং চাহিদা হ্রাস পেতে পারে।
ইংল্যান্ডের নরউইচে অবস্থিত নরফোক পেনশন তহবিলের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে নরফোক কাউন্টি কাউন্সিল এই মামলার প্রধান বাদী। শেয়ারহোল্ডারদের আইনজীবীরা নিষ্পত্তির ২৫ শতাংশ ফি চাইতে পারেন। এ হিসেবে তারা ১২২ মিলিয়ন বা ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার পেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্মার্টফোন এবং গ্যাজেট উৎপাদক অ্যাপলের শেয়ারের দাম ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চারগুণের বেশি বেড়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য হয়েছে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।
চীনের অ্যাপলের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয় ২০২০ সালে। ওই বছর অ্যাপলের বিরুদ্ধে মামলা করে চীনের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করে ব্যবহারের অভিযোগে অ্যাপলের বিরুদ্ধে ১৬০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে। সাংহাই ঝিঝেন ইনটেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক কোং নামের এই কোম্পানিটি শিয়াও-আই নামে অধিক পরিচিত বাণিজ্যিক জগতে। মামলায় উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি তাদের প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত সব পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিজ্ঞাপনী প্রচারণা বন্ধে অ্যাপলের প্রতি আহ্বান জানায় শিয়াও-আই।