মায়ের কাছে ফিরলেন রায়হান কবির

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় লকডাউন চলাকালে প্রবাসীদের ওপর দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলায় গ্রেপ্তার রায়হান কবির নারায়ণগঞ্জ শহরে তার বাড়িতে ফিরে এসেছেন। গতকাল ভোরে বাসায় এসে পৌঁছান তিনি। ছোট থেকেই প্রতিবাদী রায়হান দেশে ফেরায় তার পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আর রায়হান সেখানে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনার পাশাপাশি তার ফেরত আনার ব্যাপারে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

গত ৩ জুলাই ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় আল জাজিরার ইংরেজি অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। ওই প্রতিবেদনে লকডাউন চলাকালে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি সে দেশের সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি ফুটে ওঠে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেন রায়হান। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর রায়হানকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করে গত ২৪ জুলাই গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। রায়হানকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে।

এদিকে গ্রেপ্তারের পর দুই দফায় ২৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে কোনো চার্জ গঠন করতে পারেনি দেশটির পুলিশ। পরে পাঁচ বছরের জন্য দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ২১ আগস্ট রাতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

শনিবার ভোরে বাসায় এসে পৌঁছান রায়হান। শনিবার রাত ১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। এ সময় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মকর্তা শরিফুল হাসান খান ও রায়হানের বাবা মো. শাহ আলম বিমানবন্দরে তাকে রিসিভ করেন। পরে ইমিগ্রেশনসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাসায় ফেরেন তিনি।

রায়হান কবির জনান, দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের অভয় দিয়ে করোনা পরীক্ষা করার ঘোষণা দেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে সেই শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখাসহ নানা নিপীড়ন চালায়। সেই ব্যাপারটি তুলে ধরে প্রতিবাদ করার কারণেই সরকারের রোষানলে পড়তে হয় রায়হানকে।

গ্রেপ্তারের পর শারীরিক নির্যাতন না করলেও চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে জানান রায়হান কবির। তিনি জানান, একটি পোশাক পরেই ছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত। কিছুই আনতে পারেননি সেখান থেকে। বিমানবন্দরে আসার পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাকে নতুন জামা পরতে দেন। রায়হান ও তার পরিবারের দাবি, সব প্রবাসীর প্রতি যেন সজাগ দৃষ্টি রাখে সরকার।

এদিকে রায়হানের ফিরে আসার খবর পেয়ে সকাল থেকেই তাকে দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় জমান আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। সন্তানকে ফিরে পেয়ে তার পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ছেলে রায়হান কবিরকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন মা রাশিদা বেগম। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মা একের পর এক জানতে চান, মালয় পুলিশ তার ওপর কোনো নির্যাতন করেছে কি না। এ সময় মায়ের দুই চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। দীর্ঘদিন পর তাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন স্বজনরাও।

রায়হান কবিরের ছোট বোন মেহেরুন্নেসা বলেন, ‘ভাইকে ফিরে পেয়েছি, এটাই সবচেয়ে বড় শান্তির। টাকা-পয়সার কোনো প্রয়োজন নেই। বড় ভাই মায়ের বুকে ফিরে এসেছেন, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সান্তনা।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দরের শাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা শাহ আলমের ছোট ছেলে রায়হান কবির। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া যান। ২০১৭ সালে কুয়ালালামপুর টিএমসি ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ কোর্স শেষে ভর্তি হন এমবিএতে। লেখাপড়ার খরচ চালাতে কাজ নেন সেখানকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। রায়হান মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০