Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:02 pm

মারণব্যাধি এইডস

চারটি ইংরেজি শব্দ Acquired Immune Deficiency Syndrome Gi mswÿß iƒc AIDS সংক্ষিপ্ত রূপ AIDS (এইডস)। আবার তিনটি ইংরেজি শব্দ Human Immunodeficiency Virus -এর সংক্ষিপ্ত রূপ HIV (এইচআইভি)। এইচআইভির কারণে এইডস হয়। কোনো রোগ বা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে এইচআইভি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করে দেয়। তাই এইডস-আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজে যে কোনো রোগে (নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া প্রভৃতি) আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এইডসের কোনো প্রতিষেধক বা কার্যকর ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

মানবদেহে এইচআইভি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে এইডসের লক্ষণ দেখা যায় না। ভাইরাসটি দেহে প্রবেশ করার ঠিক কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডসের লক্ষণ দেখা দেবে তা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ও অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়। তবে এটা মনে করা হয়ে থাকে যে, এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডসে উত্তরণ পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ছয় মাস থেকে কয়েক বছর। এই সুপ্তাবস্থার তাৎপর্য হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি (যার শরীরে এইডসের কোনো লক্ষণ যায়নি বা যে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ) তার অজান্তেই অন্য সুস্থ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি ছড়িয়ে দিতে পারেন।

 

প্রধান লক্ষণগুলো

নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যে রোগে আক্রান্ত হয় সে রোগের লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে

শরীরের ওজন অতি দ্রুত হ্রাস

দীর্ঘদিন (দু’মাসেরও বেশি সময়) ধরে পাতলা পায়খানা

পুনঃপুন জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম

অতিরিক্ত অবসাদ অনুভব

শুকনা কাশি হওয়া

উল্লেখ্য, যে কারও মধ্যে উপরোক্ত একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই তার এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তবে লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

 

প্রকারভেদ

এইচআইভি রেট্রোভিরিডি গোত্রের লেন্টিভাইরাসের অন্তর্গত। লেন্টিভাইরাসগুলোর মধ্যে অনেক গঠনগত ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। এই ভাইরাসগুলো দ্বারা আক্রান্ত বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বৈশিষ্ট্যমূলক লম্বা সুপ্তাবস্থাবিশিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ লক্ষ করা যায়। এই ভাইরাসগুলো একসূত্রক, ধনাত্মক সূত্রবিশিষ্ট আরএনএ ভাইরাস। নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর ভাইরাসের আরএনএ জিনোম রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ নামক উৎসেচকের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে দ্বিসূত্রক ভাইরাল ডিএনএ’তে পরিণত হয়। এনজাইমটি ভাইরাস নিজেই তৈরি করে এবং তা ভাইরাস পার্টিকেলের অভ্যন্তরে অবস্থান করে। এই দ্বিসূত্রক ডিএনএ পোষক কোষের ডিএনএ’র সঙ্গে ভাইরাস-সৃষ্ট ইন্টিগ্রেজ এনজাইম ও পোষক কোষের কিছু কো-ফ্যাক্টরের মাধ্যমে সমন্বিত হয়ে যায় যেন জিনোমটি আত্মপ্রকাশ করতে পারে। সংক্রমণের পর দুটি ঘটনা ঘটতে পারে হয় ভাইরাস ল্যাটেন্ট থাকতে পারে এবং আক্রান্ত কোষ স্বাভাবিক

কার্যক্রম চালু রাখতে পারে অথবা ভাইরাস সক্রিয় হয়ে সংখ্যাবৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক ভাইরাস তৈরি করতে পারে, যা আরও কোষকে আক্রান্ত করে।

ভাইরাসটির দুটি প্রজাতি রয়েছে এইচআইভি-১ ও এইচআইভি-২। প্রথম ভাইরাসটি অপেক্ষাকৃত বেশি আক্রমণাত্মক ও সংক্রামক। বিশ্বে বেশিরভাগ এইচআইভি সংক্রমণের জন্য এই ভাইরাসটি দায়ী। দ্বিতীয়টি কম সংক্রামক ও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা কম। এটি প্রধানত পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোয় সীমাবদ্ধ।

 

এইচআইভির প্রজাতিগুলোর তুলনা

 

ভাইরাসের গঠন

এইচআইভি ভাইরাসের কণা মূলত গোলাকার। এই গোলকটির ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটার এবং লিপিডনির্মিত দ্বিস্তরী ঝিলি দ্বারা আবৃত। ঝিলির ওপরে দুই ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন (জিপি-১২০ ও জিপি-৪১) বের হয়ে থাকে। নিউক্লিয়াক্যাপসিডের আকার প্রায় কোনাকার, দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০০ ন্যানোমিটার। কোনাকৃতির নিউক্লিয়াক্যাপসিডের প্রশস্ত প্রান্ত ৪০ থেকে ৬০ ন্যানোমিটার চওড়া ও সরু প্রান্ত ২০ ন্যানোমিটার চওড়া। সরু প্রান্ত এক ধরনের প্রোটিনজাতীয় উপাদান দিয়ে লিপিডের ঝিল্লির সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই সংযোগকে বলা হয় কোর-ঝিলি-সংযোগ। নিউক্লিয়াক্যাপসিডের প্রোটিনগুলো দৃঢ়ভাবে আরএনএ জিনোমের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ঝিলি ও নিউক্লিয়াক্যাপসিডের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বলা হয় প্যারানিউক্লিয়েড অঞ্চল। এখানে প্রোটিন দ্বারা গঠিত ম্যাট্রিক্স বিদ্যমান। ম্যাট্রিক্সের প্রোটিনকে ম্যাট্রিক্স প্রোটিন বলা হয়। ম্যাট্রিক্সের পরে ক্যাপসিড স্তরের অবস্থান। ক্যাপসিড স্তর গঠিত হয় ‘ক্যাপসিড প্রোটিন’ দ্বারা। ক্যাপসিড নির্মিত গোলাকার গঠনের ভেতরে থাকে নিউক্লিয়াক্যাপসিড।

 

এইচআইভি জিনোম

ভিরিয়নের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসের দুটি ধনাত্মক একসূত্রক আরএনএ থাকে। দুটি আরএনএ একটি অপরটির কপি। দুটি আরএনএ’র ৫র্  প্রান্ত একে অপরের সঙ্গে হাইড্রোজেন বন্ধন অথবা ছোট অ্যান্টি-প্যারেলাল শয্যায় লেগে থাকে। সব আরএনএ’র ৫র্  প্রান্তে একটি টি-আরএনএ বিদ্যমান। এগুলো এইচআইভি ভাইরাসের ক্ষেত্রে ঋণাত্মক আরএনএ সংশ্লেষণের সময় প্রাইমার হিসেবে কাজ করে।

 

এইচআইভি এনজাইম

এইচআইভি ভাইরাসের ভিরিয়নে কয়েক ধরনের এনজাইম পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ, ইন্ট্রিগ্রেজ,

ভিপি-আর। রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইম রাইবোনিউক্লিয়েজ ক্রিয়া ছাড়াও

আরএনএজ-এইচ ক্রিয়া প্রদর্শন করে। (চলবে)