মার্কিন কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ

The seal for the International Monetary Fund is seen near the World Bank headquarters (R) in Washington, DC on January 10, 2022. (Photo by Stefani Reynolds / AFP)

নিজস্ব প্রতিবেদক: গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল। বিনা দরপত্রে এ কাজ পেতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এরই মধ্যে এক্সন মবিল সাগরের ১৫টি ব্লকে অনুসন্ধান চালাতে সরকারের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল।

গতকাল জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। তবে মার্কিন কোম্পানিটির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির আগে বিস্তারিত আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের। এক্সন মবিলের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি কমিটি আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে। অনুসন্ধান শেষে যদি সবকিছু ফলপ্রসূ হয়, তাহলে এক্সন মবিলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করা হবে। এজন্য পিএসসিকেও ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির (অটোমেটেড প্রাইসিং ফর্মুলা) দিকে যাচ্ছে সরকার। মূলত আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসেবে এই পদ্ধতির দিকে এগুচ্ছে সরকার। এ পদ্ধতি চালু হলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। আইএমএফ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে দিতে পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে।

জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথমে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির কার্যকারিতে পর্যালোচনা করবে সরকার। এরপর গ্যাসের ক্ষেত্র এমন মূল্য পদ্ধতির বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির ওপর একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষ থেকে জ্বালানি বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকও কাজ করছে। প্রতিবেদন নিয়ে জ্বালানি বিভাগও কাজ করছে। পদ্ধতিটি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির একটি প্রতিনিধিদল ভারতসহ আরও একটি দেশ সফর করবে। সব বিষয় পর্যালোচনা শেষে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে এই পদ্ধতি চালু করতে চায় সরকার।

বর্তমানে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য নির্বাহী আদেশে নির্ধারণ করে সরকার। আর জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি।

প্রসঙ্গত, গতকাল জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে আইএমএফ কর্মকর্তাদের বৈঠকে ছিলেন জ্বালানি

সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার। এ সময় জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বিপিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দ বৈঠকে তাদের দলের নেতৃত্ব দেন।

আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। সংস্থাটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে এ ঋণ দেবে। ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার গত ৩০ জানুয়ারি ছাড় করা হয়েছে। আগামী নভেম্বরে ছাড় হবে দ্বিতীয় কিস্তি। দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পেতে যে শর্ত বা সংস্কারমূলক কাজ করার কথা, তার অগ্রগতি দেখতে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার আইএমএফ  প্রতিনিধিদল ঢাকা আসে। এরপর তারা অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে।

ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের অন্যতম শর্ত ছিল জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা। গতকালের বৈঠকে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয় এখন গ্যাস ও জ্বালানি তেলে তেমন লোকসান হচ্ছে না। বিপিসির সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটির আয়, ব্যয়, ভর্তুকি, লোকসান, স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতিরিক্ত সক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০