Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:13 pm

মার্কিন ডলার কেন এত শক্তিশালী?

রিয়াজুল হক: সারাদিন অফিস করার পর বাসায় মনজুরুল নিজের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় ছোট ভাই জহির রুমে প্রবেশ করল।

জহিরঃ ভাইয়া, মার্কিন ডলারের বিষয়ে কিছু বলতো?
মনজুরুলঃ কি বলবো?

জহিরঃ ডলার কেন এত শক্তিশালী মুদ্রা?
মনজুরুলঃ যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মুদ্রা তো শক্তিশালী হবেই।

জহিরঃ নিয়ন্ত্রণ করলেই কি শক্তিশালী হবে? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
মনজুরুলঃ একদিনে তো আর ডলার শক্তিশালী মুদ্রা হয়নি। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

জহিরঃ কী কী কারণ?
মনজুরুলঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের দেশগুলো তাদের সংরক্ষিত স্বর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ( ১ আউন্স = ৩৫ ডলার এই রেটে) জমা রেখেছিল। অনেকেই মনে করেন, স্বর্ণের দাম ডলারে ফিক্সট হওয়ার পর থেকেই ডলারের উত্থানের শুরু।

সে সময় ইউরোপীয় দেশগুলোর ভয় ছিল, হিটলার হয়ত তাদের স্বর্ণগুলো হস্তগত করে ফেলবে। এই কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করলো। যখনই তাদের স্বর্ণের দরকার হবে, তখন তারা যুক্তরাষ্ট্রকে কমন কারেন্সি ডলার দেবে এবং স্বর্ণ ফিরিয়ে নেবে। এর ফলে ডলারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়লো।

অর্থাৎ সব স্বর্ণ জমা থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভল্টে আর বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ সংরক্ষিত হয় ডলারে।

জহিরঃ এই কারণেই কি ডলার এত শক্তিশালী মুদ্রা?
মনজুরুলঃ এরপরে ধর, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল আমদানিকারক দেশ। ডলারের মান ওঠানামার উপরেও নির্ভর করে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর আয়। অর্থাৎ ডলারের মূল্য বেড়ে গেলে কিংবা কমে গেলে তেলের মূল্যের উপর প্রভাবও পড়ে। এর ফলে, তেল উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারী দেশগুলোর বাণিজ্যের উপরে ডলারের একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।

জহিরঃ হ্যাঁ, এটা একটা ভালো বিষয় বলেছো?
মনজুরুলঃ এছাড়া, ডলারের মান অন্যান্য দেশের মুদ্রা থেকে বেশি স্থিতিশীল। এই কারণে বিশ্বব্যাপী ডলারের প্রচলন বেশি এবং আন্তর্জাতিক পণ্য বা সেবা ডলারের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়ে থাকে। গ্রহণযোগ্য হবার কারণেও ডলার ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। যে কোন দেশে ডলার নিয়ে সেটা স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময় করা অত্যন্ত সহজ।

জহিরঃ এখন বুঝেছি, কেন মার্কিন ডলার এত শক্তিশালী।
মনজুরুলঃ বুঝলে ভালো। এখন যা। আমি একটু বিশ্রাম নেব।

লেখকঃ যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক