শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল যত স্পষ্ট হচ্ছিল, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচনে পরাজিত রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক টুইট তা নাকচ করে দিচ্ছিল। তার বক্তব্য, ভোট গণনায় জালিয়াতি হয়েছে এবং নির্বাচনে তিনিই জয়লাভ করেছেন। এ অভিযোগের রেশ ধরেই গত সোমবার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার কেন্দ্রীয় প্রসিকিউটরদের ভোট গণনায় অস্বাভাবিকতার তদন্ত করতে অনুমতি দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে বিচার বিভাগের নির্বাচন-সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধবিষয়ক শীর্ষ আইনজীবী রিচার্ড পিলগার পদত্যাগ করেছেন। খবর: এএফপি, এপি, রয়টার্স।
দেশজুড়ে বিভিন্ন অ্যাটর্নিদের উদ্দেশে একটি চিঠিতে উইলিয়াম বার লেখেন, ‘যেহেতু আমাদের ভোটদান প্রক্রিয়া-সম্পন্ন হয়েছে, তাই আমি নির্বাচনের ফলাফল সরকারিভাবে ঘোষণার আগেই ভোট-সংক্রান্ত অস্বাভাবিকতার তদন্ত করবার এখতিয়ার আপনাদের দিচ্ছি। যদি এমন কোনো গুরুতর অস্বাভাবিকতার অভিযোগ এসে থাকে, যা কোনো রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল বদলে দিতে পারবে বলে আপনাদের ধারণা, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও পর্যালোচনা করা যেতে পারে।’
সবকটি ভোট গণনা সরকারিভাবে শেষ হওয়ার আগেই এমন অনুমতি দিলেন তিনি, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত কেন্দ্রীয় নীতির বিপরীত। নির্বাচনের ফল ও ভোট গণনা বিষয়ে তদন্ত সাধারণত পুরোটাই থাকে রাজ্যের নিজস্ব এখতিয়ারে। ভোট গণনা সম্পূর্ণ শেষ হওয়া ও ফলাফল নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু উইলিয়াম বার এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘এতদিন ধরে চলে আসা রীতিগুলো আসলে কোনো বাধাধরা নিয়ম নয়।’ ফলে যদি তদন্তকারীদের মনে হয় যে নির্র্বাচনের ফলাফল বদলে দেওয়ার মতো কিছু আছে, সেক্ষেত্রে তাদের সেই উদ্দেশ্যেই কাজ করা উচিত।
বার আরও বলেন, ‘গুরুতর অভিযোগকে সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে, এবং আন্দাজ ও নিছক ধারণার ওপর ভিত্তি করে ওঠা অভিযোগ কখনোই কেন্দ্রীয় তদন্তে জায়গা পাবে না।’ বারের চিঠি প্রকাশ্যে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচার বিভাগের নির্বাচনী অপরাধ দপ্তরের প্রধান রিচার্ড পিলগার পদত্যাগ করেন। সহকর্মীদের কাছে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় পিলজার বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় পদত্যাগ করছি। তিনি লেখেন, ‘নতুন নীতি ও এর বদলের সঙ্গে আমার জানাশোনা থাকায়… আমি নিশ্চিতভাবে আমার ভূমিকা থেকে দুঃখজনকভাবে পদত্যাগ করব।’ রিচার্ড পিলগার পদত্যাগ করলেও বিচার বিভাগের অন্যান্য পদে থাকবেন কিনা, তা স্পষ্ট করে বলেননি।
গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে বিপুল ব্যবধানে হারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরই নির্বাচনে ভোট চুরির অভিযোগ তোলেন তিনি। এই অভিযোগে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়ায় বাইডেনের জয় ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশনা চেয়েছে ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির। ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন, যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু মিচ ম্যাককনেলসহ একাধিক রিপাবলিকান নেতৃত্বের মত, এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানাবার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
ম্যাককনেল দাবি করেন, ‘পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে রিপাবলিকান পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। বরং কর্মকর্তারা ডেমোক্র্যাট ভোটারদের তাদের ভুলভাল ব্যালট ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।’ তিনি এমন দাবি তুললেও ভোট গ্রহণ কার্যক্রমের প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে ভিন্ন কথা। ফিলাডেলফিয়া এনকোয়ারার বলছে, কেন্দ্রে উভয় দলের পর্যবেক্ষকরাই উপস্থিত ছিলেন। তবে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভোট গণনার টেবিলের ১৩ থেকে ১০০ ফুট দূরে ছিলেন তারা।
সিনেটে ম্যাককনেল বলেছেন, আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের ভোট পুনর্গণনার অনুরোধ করার শতভাগ অধিকার রয়েছে। সংবিধানের আলোকে ধনী সংবাদমাধ্যমগুলোর এ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।
এদিকে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও এখনও পর্যন্ত ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার কথা। এর আগেই বিদায়ী ও আসন্ন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি সেরে নিতে হয়। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও হার মেনে না নেওয়ায় সেই সমন্বয়ের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। সোমবার বাইডেন শিবির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা।
বিদায়ী ও আসন্ন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি করে থাকে জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ)। তারাই পুরোনো প্রশাসনের কাছ থেকে নুতন প্রশাসনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটি করে থাকে। এখন এই জিএসএ-র বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাইডেন শিবির।
জিএসএ কখন সরকার বদলের এ প্রক্রিয়া শুরু করবে সে ব্যাপারে আইনে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে বাইডেন শিবির বলছে, তাদের বিজয় পরিষ্কার। ফলে এখানে বিলম্ব বা কালক্ষেপণ করার কোনও সুযোগ নেই।
জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বর্তমান প্রশাসক এমিলি মারফি। ২০১৭ সালে তাকে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে এখনও কারও বিজয় চূড়ান্ত বলে মনে করছেন না মারফি। তবে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, মারফি একজন পেশাদার মানুষ। ফলে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হতে তিনি সময় নিচ্ছেন।