Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:57 pm

মার্কিন বাজারে জিএসপি আটকে আছে রাজনৈতিক কারণে

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি (শুল্কমুক্ত) পাওয়া সহজ নয়। রাজনৈতিক কারণে আটকে আছে জিএসপি সুবিধা। তবে ইউরোপের বাজারে ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) সুবিধা হারালেও জিএসপি প্লাস পেতে বড় কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, জিএসপি পাওয়া এত সহজ বিষয় নয়, এখানে রাজনৈতিক বিষয় জড়িত। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুগুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জিএসপি সুবিধা পেতে শর্তগুলো পূরণ করেছি, আশা করছি জিএসপি সুবিধা পাব।

দেশের তৈরি পোশাক খাতের ইমেজ বৃদ্ধি ও ব্রান্ডিয়ের লক্ষ্যে বিজিএমইএর নেতারা যুক্তরাষ্ট্রে মাসব্যাপী সফর করেন। সফরে শিল্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মহল, স্টেকহোল্ডার ও ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সফর পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

বিজিএমইএর সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর অনেকটা অবরুদ্ধ ছিলাম। এখন আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি।

তিনি বলেন, ইউরোপ আমাদের প্রধান বাজার, যেখানে আমাদের ৬০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মাধ্যমে এ বাজারটিতে আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় পরিবর্তন আসবে। যদিও বর্তমান সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এরপর যেন অন্তত ১২ বছর এ সুবিধা (ইবিএ) বহাল থাকে তার জন্য সরকার ও বিজিএমইএ একত্রে কাজ করছে।

আমরা ইবিএ-পরবর্তী শুল্কসুবিধা ?‘জিএসপি প্লাসের’ বিষয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও ব্রাসেলসে একাধিক বৈঠক করেছি। বিশেষ করে জিএসপি প্লাসের একটি অন্যতম শর্ত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ইম্পোর্ট থ্রেশোল্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া বা এর বিকল্প ফর্মুলা প্রবর্তনের অনুরোধ করেছিলাম।

অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, ইইউ তাদের প্রস্তাবিত ২০২৪-২০৩৪ জিএসপি রেগুলেশনে এই ইম্পোর্ট থ্রেশোল্ড শর্তটি বাদ দিয়েছে। ফলে আমরা যখনই ইবিএ সুবিধা হারাই না কেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আর বড় কোনো বাধা থাকল না।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় আমাদের পোশাক রপ্তানি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে শিল্পে নতুন নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হচ্ছে। যেমন বিশ্বব্যাপী ফ্রেইট ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় কনটেইনার ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই ফ্রেইট খরচ কমানোর জন্য ক্রেতাদের মধ্যে নিয়ারশোরিংয়ের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ক্রেতারা এখন কাছের দেশ থেকে কিছুটা বেশি দামে হলেও পোশাক ক্রয় করছেন। কারণ এতে ফ্রেইট কস্ট কম লাগছে, আর লিড টাইম কমে আসছে। এটি আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

এছাড়া আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দরপতন এবং স্থানীয় পর্যায়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টির পরিবর্তে ৩৬টি করা প্রয়োজন। লোকাল ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কাঁচামাল, সুতা ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যার হাউস লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতা রহিত করা।

গ্রুপ অব কোম্পানির একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ না করা। বন্ড লাইসেন্সে এইচএস কোড ও কাঁচামালের বিবরণ অন্তর্ভুক্তির জটিলতা নিরসন করা। সুতা থেকে নিট গার্মেন্টস উৎপাদনে অপচয় হার বৃদ্ধির কারণে জরিমানা আরোপ না করা।

বিমানবন্দরে রপ্তানিপণ্য দ্রুত স্ক্যানিংয়ের জন্য স্থাপিত ইডিএস মেশিনগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং পণ্য নামানোর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেনোপির ভেতরে পণ্য নিয়ে আসা, যাতে করে পণ্যগুলো বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট না হয়।

বেনাপোল বন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দর, বিশেষ করে ভোমরা ও সোনামসজিদের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় এবং বস্ত্র ও পোশাক খাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি ও আংশিক শিপমেন্টের অনুমোদন দেওয়া।

এ বিষয়গুলোসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, করোনার ফলে শিল্পের ক্ষতি কাটিয়ে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে ও কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান অব্যাহত রাখতে সরকারের নীতি সহায়তা ও সমর্থন প্রদান অব্যাহত থাকবে।