মার্কেটে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রশ্ন

সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে ডিসিসি (ডিএনসিসি) মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর এরই মধ্যে গণমাধ্যমে আলোচিত। এতে প্রাণহানি না হলেও ব্যবসায়ীদের যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তাতে সংশ্লিষ্টদের সান্ত¡না জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। শোনা যায়, হাজারো দোকান ছিল সেখানে। কোটি কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ পুড়ে যাওয়ার পর শোকাহত ব্যবসায়ীদের আহাজারি মর্মভেদ করেছে সবার। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে নাকি ঋণ নিয়ে বা অন্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধারে পণ্য কিনে মজুত রেখেছিলেন মার্কেটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ অবস্থায় ঋণ বা ধার পরিশোধ কঠিন হবে তাদের পক্ষে। বিষয়টি গভীর সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে, সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রতি রাষ্ট্রের সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে।

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য মেলেনি। একদল দাবি করছে, এটি নাশকতা, সরকারবিরোধী শক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে আগুন দিয়েছে। কেউ বলছে, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ থেকেই এর সূত্রপাত। আরেক দলের মন্তব্য, বিড়ি-সিগারেটের তুচ্ছ আগুন থেকেই সৃষ্টি হয় অগ্নিকাণ্ড। শীতের রাতে আগুন পোহাতে গিয়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কারণ যা-ই হোক, পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে ক্ষতি যে অনেক কম হতো, তা হলফ করেই বলা যায়। এ কথা কেবল ডিসিসি মার্কেট নয়, গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারের বেলায়ও প্রযোজ্য। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যে আহাজারি আমরা দেখেছি, সাম্প্রতিক সময়ে তেমন একাধিক দুঃখজনক ঘটনার নজির রয়েছে ঢাকার বাইরেও। কথা হলো, ডিসিসি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হয়তো একেবারে পথে বসতে হবে না। তবে একই ঘটনা মফস্বলের একজন মাঝারি ব্যবসায়ীকে অটোরিকশা চালকে পরিণত করতে পারে। ফলে ব্যবসা ও বাণিজ্যকেন্দ্রে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

লক্ষণীয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লেগে যায়। এজন্য তাদের দোষারোপ করা ঠিক হবে না। বরং জানমাল উদ্ধারে তাদের আন্তরিকতা সন্দেহাতীত বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে। কথা হলো, দুর্ঘটনায় তারা হলেন সেকেন্ডারি ফোর্স। অগ্নিনিরাপত্তার প্রাথমিক ও মুখ্য দায়িত্বটা ছিল সংশ্লিষ্ট মার্কেট কর্তৃপক্ষ তথা প্রত্যেক দোকান মালিকের। ডিসিসি মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা যথেষ্ট ছিল কি না, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু ইতোপূর্বে সংঘটিত অনেক স্থানের অগ্নিকাণ্ডে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না সেখানে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নিয়মিতই জনসচেতনতার উদ্যোগ নেয়। অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামও কিনে থাকেন অনেকে। পরে দেখা যায়, কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে ওসব সরঞ্জাম হালনাগাদে মনোযোগ থাকে না একশ্রেণির ব্যবসায়ীর। পরিণামে ওই এক বা গুটিকয়েক ব্যক্তির উদাসীনতা বা গাফিলতির দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবাইকে। সুতরাং সারা দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেই এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতি থাকার পরও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন অর্থনীতির দিকটি আরও গুরুত্বসহ আমলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করেন ও কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখেন।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০