প্যাকেজিং ও লেবেলিং দুটি একই মনে হলেও আপাতদৃষ্টিতে দুটির মধ্যে ফারাক আছে। পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহন সুবিধার জন্য একটি ধারক বা পাত্র দ্বারা তাকে আবৃত করার প্রক্রিয়াকে বলে প্যাকেজিং। আর লেবেলিং হলো মোড়কের গায়ে লিখিত বা দৃশ্যমান কোনো তথ্যের সমষ্টি, যা ওই পণ্য বহন ও ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। মার্কেটিংয়ে দুটি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন কয়েক মাস আগের কথাÑকাঁচামালসহ উৎপাদন কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদনকারীদের পণ্যেরও দাম বাড়াতে হয়। কিন্তু দাম বাড়লে ক্রেতাদের ক্রয় অভ্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। তাই তারা পণ্যের দাম না বাড়িয়ে পণ্যের দাম ঠিক রেখে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে পণ্যের প্যাকেজিং শুরু করে সহজ কথায় দাম না কমিয়ে কম পরিমাণে পণ্য বাজারে ছাড়তে শুরু করে। উদাহারণ হিসেবে যদি দেখি, নেসক্যাফে তাদের থ্রি ইন ওয়ান কফি ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করে, যার ফলে খুচরা বাজারে ক্রেতারা নেসক্যাফে কফি বাদ দিয়ে বাজারে থাকা অন্য একটি ব্র্যান্ড কফি (কঙঋও)-তে শিফট করতে থাকে। পরে কফি (কঙঋও) তাদের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা করায় ক্রেতারা কম দামি অন্যান্য ব্র্যান্ডের দিকে ঝুঁকতে থাকে, ফলে কফি (কঙঋও) তা বুঝতে পেরে পরিমাণ কমিয়ে আবার ১০ টাকার কফি বাজারে ছাড়ে। এদিকে নেসক্যাফে অনেক প্রমোশনাল স্ট্র্যাটেজি হাতে নিলেও পরে তাদেরও একই পথে হাঁটতে হয়ে। তারা তাদের প্রোডাক্ট লাইনে ১০ টাকার নতুন কফি বাজারে আনে। এছাড়া আমরা পাঁচ টাকার বিস্কিটের যে মিনিপ্যাক বাজার থেকে কিনি, তারাও দাম ঠিক রেখে পরিমাণ কমাতে থাকে। এভাবে কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের সঙ্গে সাইকোলজিকাল গেম খেলে থাকে। এবার আসি লেবেলিং প্রসঙ্গে। আগেই বলেছি, লেবেলিং হলো মোড়কের গায়ে লিখিত ও দৃশ্যমান কোনো তথ্যের সমষ্টি, যা ওই পণ্য বহন ও ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। লেবেলিং কেন গুরুত্বপূর্ণ? যুগ বদলাচ্ছে। আজকাল হাতের মুঠোয় পুরো দুনিয়া। ক্রেতারা হয়েছে সচেতন, তারা প্রোডাক্ট কেনার আগে প্রোডাক্টে কী কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে, এটি কোনো ক্ষতি হবে কি না, বা দুটো প্রোডাক্টের মধ্যে তুলনা করতে সহজ হয়। এছাড়া বিক্রেতারা লেবেলিংয়ের মাধ্যমে ইমোশনাল মার্কেটিংয়ে বিশেষ ফোকাস দেয়। যেমন পণ্যের গায়ে লেখা থাকেÑ‘দেশি পণ্য কিনে হোন ধন্য’; কিংবা একটি দেশীয় পণ্যের লেখা থাকেÑ‘ডব ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ চধষবংঃরহরধহ,’ যা ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ করে। ফলে বাড়ে বিক্রি। এছাড়া সুন্দর প্যাকেজিং ও লেবেলিং ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনে। পণ্যের প্যাকেজিং-লেবেলিং ক্রেতাদের পণ্যের প্রতি একটি পজিটিভ ধারণা তৈরি করে ক্রয়ে আগ্রহ বাড়ায়। একটি পণ্য যতই ভালো হোক, যদি প্যাকেজিং-লেবেলিং ভালো না হয়, তাহলে ক্রেতারা পণ্যের কোয়ালিটি সম্পর্কে ভুল বিচার করবে। তাই প্রতিটা কোম্পানি প্যাকেজিং-লেবেলিংয়ে বিশেষ নজর দেয়। প্রোডাক্ট বাজারে ছাড়ার পর কোম্পানির প্রথম টার্গেট থাকেÑকীভাবে ক্রেতাদের প্রথম ব্যবহারে আগ্রহী করা যায়। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়Ñ‘কোনো পণ্য প্রথমবার ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনি কী বেশি প্রাধান্য দেন,’ তাহলে আপনি অবশ্যই উত্তর দেবেন, ‘প্যাকেজিং।’ তাই মার্কেট দখলে নিতে এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্যাকেজিং-লেবেলিংয়ে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন।
তাজুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়