মেহেদী হাসান: কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালককে প্রায় সাড়ে ৫২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রধান শাখা থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক আকরাম হোসেনকে এ ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়েছে। পরিদর্শনকালে ব্যাংকটির প্রধান শাখা এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় বা স্থানান্তরের কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি। ফলে ওই পরিমাণ ঋণের আদৌ কোনো ডকুমেন্ট আছে কি না কিংবা সেটি কীভাবে শাখা থেকে উধাও হয়েছে বিষয়টি নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রদত্ত ঋণের কোনো ডকুমেন্ট না পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঋণগ্রহীতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক আকরাম হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান শাখা কর্তৃক মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তিন লাখ শেয়ারের (ফেরদৌসি বেগমের নামে) বিপরীতে ৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা হয়।
আবার আকরাম হোসেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান ফারস হোটেল এবং মেসার্স আকরাম ট্রেডার্সের নামেও ঋণ নিয়েছেন। ফারস হোটেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাখা কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকরাম হোসেনের নামে রক্ষিত মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক কোটি ২৫ লাখ শেয়ারের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ১১ কোটি টাকা মেয়াদি ঋণ ও পাঁচ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল মঞ্জুর করা হয়। পরবর্তী সময়ে আবার মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ৫০ হাজার শেয়ার প্লেজ হিসেব গ্রহণপূর্বক পাঁচ কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ৯ কোটিতে উন্নীত করা হয়।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হোটেলের আধুনিকায়ন ও পরিচালনা বাবদ ২০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলেও নথিপত্রে তার কোনো হদিস নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মুজিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এসব তথ্য সঠিক নয়। আমাদের কাছে এ রকম কোনো প্রতিবেদন আসেনি। তাই আমরা এ বিষয় সম্পর্কে জানি না। মেসার্স আকরাম ট্রেডার্স এবং ফারস হোটেলকে আমরা ঋণ দিয়েছি। তবে তা নিয়মিত আছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমাদের ব্যাংক অনেক ভালো চলছে।’
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক আকরাম হোসাইন বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কোনো ব্যাংকে আমার ঋণ থাকতেই পারে। আমি এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। তবে এখানে কোনো অনিয়ম নেই।
এ ঋণের বিষয় সম্পর্কে কথা বলতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর শাহা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘প্রচলিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী যে নীতিমালা আছে সেই নীতিমালার আওতায় ব্যাংকের সব কাজ আমাদের রেগুলেট করার কথা ও মনিটরিং করার কথা। সেটি আমরা করে যাচ্ছি। এগুলো আমরা সরেজমিনে গিয়েও করি এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েও করে থাকি। বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রেও আমরা তদারকি করে থাকি। ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে আমরা তাদের নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এছাড়া কোনো ব্যাংকের অবস্থা যদি বেশ খারাপ হয়, তাহলে সেসব ব্যাংকে আমরা পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকি।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ যে ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়, এনআরবিসি ব্যাংক তারই একটি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল এ ব্যাংকের ইচ্ছাপত্র (এলওআই) দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ফরাসত আলীর নামে।