’নিজস্ব প্রতিবেদক: ফের আমদানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে, যা চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফেব্রুয়ারিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আমদানি প্রবৃদ্ধি। ওই মাসে আমদানিতে ১৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে মার্চে এসে আবারও হোঁচট খেল আমদানি প্রবৃদ্ধি। ওই মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর প্রথম ৯ মাসে মোট আমদানি হয়েছে ৪৯ দশমিক ২১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫৮ দশমিক ২৭৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৯ মাসে আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ০৫৭ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যা ছিল ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত ৯ মাসে শুধু চিনি ও জ্বালানি তেল আমদানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাকি সব পণ্যই আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম পণ্য আমদানি হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে। ওই মাসে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল চার দশমিক ৬২৪ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরে ফেব্রুয়ারিতে পণ্য আমদানি হয়েছে পাঁচ দশমিক ২৪৮ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে আমদানি বেড়েছিল ৬২৪ মিলিয়ন ডলার বা ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ঋণাত্মক ছিল আগস্টে। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৪৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছরের একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগস্টে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। পরের মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ২৭৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ১৯২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে গত নভেম্বরে দেশে আমদানির পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক ৮৯১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই মাসে এর পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৫৯২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি কমেছে এক দশমিক ৭০১ বিলিয়ন ডলার বা ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছর অপর মাসগুলোর মধ্যে জুলাইয়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ, ডিসেম্বরে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ ও জানুয়ারিতে সাত দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে আমদানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম ঋণাত্মক ছিল। তবে মার্চে এসে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মকের পরিমাণ আবার বেড়েছে। ওই মাসে ঋণাত্মক দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯ মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে চাল আমদানি কমেছে ৯৭ দশমিক ১০ শতাংশ। মূলত ধান উৎপাদনে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চাল আমদানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সামান্য কিছু সুগন্ধি চাল আমদানি হয়েছে এ সময়ে। ৯ মাসে গম আমদানি কমেছে ১০ শতাংশের বেশি।
খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে ধারাবাহিকভাবে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে ৩১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে চিনি আমদানি বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে আমদানি বৃদ্ধিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। ৯ মাসে এর আমদানি বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তবে তুলা আমদানি কমেছে ২৪ দশমিক ৮৮ শতাশ, সুতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য আট শতাংশ এবং অন্যান্য মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ১৫ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এর বাইরে চলতি অর্থবছর মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ২২ শতাংশ। মূলধনি পণ্যের মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৩ শতাংশের বেশি এবং অন্যান্য মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। উল্লেখিত খাতগুলোর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি কমেছে চার শতাংশের বেশি।