সাইফুল্লাহ আমান: ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা’ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। গতকাল ইপিবির এক সভায় বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে অন্যান্য বছরের মতো জানুয়ারিতে মেলা হচ্ছে না। শীতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় মার্চে মেলা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া প্রথমবারের মতো মেলা অনুষ্ঠিত হবে পূর্বাচলে স্থাপিত স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক কর্মকর্তা জানান, এবারের বাণিজ্যমেলা জানুয়ারির পরিবর্তে মার্চ মাসে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সভায় মেলার বিষয়ে আরও কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সাধারণত বাণিজ্যমেলা এক মাসব্যাপী হওয়ার রেওয়াজ থাকলেও এবার সে সূচিতে পরিবর্তন আসছে। এবারের মেলা এক মাসের বেশি সময় ধরে হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে মেলা অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে টিকেটিং সিস্টেম বদলে যাচ্ছে। এবার থাকছে না কোনো কাউন্টার, টিকিট দেয়া হবে অনলাইনে। সেইসঙ্গে এবার দৈনিক টিকিট বিক্রির সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। মূলত অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। টিকিট কাউন্টারে যাতে দর্শনার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়তি ভিড় সৃষ্টি না করেন, সে লক্ষ্যে প্রতিদিন মেলার জন্য সীমিতসংখ্যক টিকিট ছাড়া হবে অনলাইনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে পূর্বাচলে কতজন মানুষ একসঙ্গে একই দিনে মেলায় অংশ নিতে পারবে, সেই অনুপাতে টিকিট ছাড়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মাস্ক ছাড়া কাউকে মেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
করোনার প্রভাবে বিশ্বের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বদলে গেছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এরই মধ্যে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অনেক অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হচ্ছে। এসব আয়োজনের তুলনায় বাণিজ্যমেলায় জনসমাগম হয় অনেক বেশি। এমন আয়োজনে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত আয়োজকরা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কীভাবে মেলাকে কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে দূরে রাখা যায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হবেÑসে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ চাওয়া হবে।
মেলার মাঠে কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন ইপিবির কর্মকর্তা। এছাড়া মেলায় ঢোকার প্রবেশপথে থাকবে শারীরিক তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা। একযোগে কাজ করবে মেলা আয়োজক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। থাকবে ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সরকার সর্বোচ্চ তৎপর। নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবস্থা। যেহেতু গরমে করোনার প্রকোপ কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেজন্য বাণিজ্যমেলা দুই মাস পিছিয়ে মার্চে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা যায়। মার্চ মাস থেকেই যেহেতু দেশে গরমের প্রভাব বেড়ে যায়, তাই মার্চ মাসকে বেছে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
১৯৯৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে হয়ে আসা এ মেলার প্রধান লক্ষ্য হলো দেশীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং। বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি দেশও এ মেলায় তাদের দেশীয় পণ্য নিয়ে অংশ নেয়। অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পণ্যকে পরিচয় করিয়ে দিতেই মূলত আয়োজন করা হয়ে থাকে বাণিজ্যমেলা। যদিও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এ লক্ষ্য পূরণে কতটুকু সফল হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এর মাধ্যমে দেশের পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার কতটা উš§ুক্ত হয়েছে, তা জানাতে পারেনি ইপিবিÑদেশের অর্থনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে তারও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।