নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ব্যাপকহারে। একক মাস হিসেবে গত মার্চে ৭৭ হাজার ২২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। হিসাব বলছে, এ পরিমাণ লেনদেন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রæয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৩ শতাংশ লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
কভিডের কারণে ভিড় এড়াতে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। ফলে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহকের সংখ্যা। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা।
সং?শ্লিষ্টরা জানান, তাৎক্ষণিকভা?বে দ্রæত শহর থেকে গ্রামে; গ্রাম থেকে শহরেÑসর্বত্র টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে গ্রাহকসংখ্যার স?ঙ্গে বাড়?ছে লেনদেনের পরিমাণ। এছাড়া করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ সরাসরি ও নগদ লেনদেনের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশলেস লেনদেনে বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। পাশাপাশি এখন শ্রমিকদের বেতন-বোনাস, সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ১৩টি ব্যাংক। গত মার্চে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ২৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ২০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে পাঠানো হয় (সেন্ড মানি) ২২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।
গত মার্চে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। ওই সময়ে সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা প্রদানের পরিমাণ বেড়ে ১৮২ টাকায় পৌঁছেছে। দুই হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান, ৬৯৪ কোটি টাকা মোবাইল ফোনের ব্যালান্স রিচার্জ ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ বাবদ এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে এমএফএস সেবায় ১১ লাখ ৫১ হাজার এজেন্ট যুক্ত রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায়। নিবন্ধিত গ্রাহক ১০ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে তিন থেকে চার কোটি হিসাবে প্রতি মাসে নিয়মিত লেনদেন হয়।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অনেক সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো, অর্থাৎ রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।