সাধারণত যাদের হাতে বাড়তি টাকা থাকে, তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের উত্থান দেখলেই কিছু বিনিয়োগকারী তাদের জমিজামা বিক্রি করে, কিংবা মার্জিন ঋণ নিয়ে, অথবা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এটা আসলে কাম্য নয়। বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করার কথা জানা যায়নি। আর এই মার্জিন ঋণ নেওয়ার কারণে অনেক বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত হতে হয়। তাই মার্জিন ঋণের বিষয়ে বিএসইসির একটু ভেবে দেখা উচিত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছিলেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল এবং দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালটেন্ট রায়হান এম চৌধুরী।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থানে নেই। এখানে বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। বিগত বছরের তুলনায় বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভালো। বিশেষ করে হরতাল, ভাঙচুর প্রভৃতি বিষয় এখন নেই। তবুও জাতীয় নির্বাচন সামনে এলে বিনিয়োগকারীরা একটু সতর্ক অবস্থানে থাকে নির্বাচনে কী হয় না হয় এবং অর্থনীতির পালাবদলে কোন সরকার আসবে, এসব কারণে। আবার পুঁজিবাজারে নতুন করে কোনো ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। যা আছে তা অনেক পুরোনো এবং এর বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। ওইসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারসাজি হয়ে থাকে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিনিয়োগকারীদের কষ্টের টাকা এভাবে নষ্ট হতে পারে না।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার এবং স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন না করে ব্যাংকের প্রতি ঝোঁক বেশি। দেশে অনেক স্থানীয় ও বহুজাতিক ভালো কোম্পানি রয়েছে এবং ওইসব কোম্পানি দেশে ভালো ব্যবসা করছে, কিন্তু এদের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। আবার দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক, কিন্তু সেভাবে পুঁজিবাজার এগোতে পারেনি। এসব কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা নেই। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করার বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে ভালো করতে হলে প্রয়োজন সবার সমন্বিত উদ্যোগ। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ আরও যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো রয়েছে, সেইসব নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এক জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল অবস্থানে নেওয়া যায়। কারণ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারে নতুন করে তেমন ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা হয়েছে বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। বাজারের গভীরতা ও টার্নওভার অনেক কম। এটি আসলে পুঁজিবাজারের জন্য অশনি সংকেত। আবার যে শেয়ারের দাম বাড়ার কথা সেটি বাড়ছে না, বরং এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা কী দেখে বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পেতে হলে অবশ্যই বাজারের গভীরতা বাড়াতে হবে এবং ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজারে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্ত মূল কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এখনও বাকি রয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন কোনো কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়, তখন কিন্তু ওইসব কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা ফেরত পায় না।
তিনি আরও বলেন, যাদের বাড়তি টাকা আছে, তারা তাদের বাড়তি টাকার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা তাদের জমিজামা বিক্রি করে এবং মার্জিন ঋণ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এটা আসলে কাম্য নয়। বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করার কথা আমার জানা নেই। অর্থাৎ মার্জিন ঋণের ব্যাপারে বিএসইসিকে একটু ভেবে দেখতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ