মো. আসাদুজ্জামান নূর: মার্জিন ঋণ নিয়ে বিএসইসির নতুন নির্দেশনার পর গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) উত্থান দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এর আগে টানা চার কার্যদিবস পতন হয়েছে ডিএসইতে। গতকাল সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে সব সূচকের উত্থানে লেনদেন হয়। তবে আগের দিনের তুলনায় টাকার অঙ্কে লেনদেন কমেছে।
গতকালের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সব সূচকের উত্থানের দিনে চাঙা ভাব ফেরেনি লেনদেনে। আগের কার্যদিবসের তুলনায় গতকাল প্রায় দেড়শ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের দিনে এটি ছিল ৮৮৫ কোটি ৬১ কোটি টাকা।
আগের কার্যদিবসে শীর্ষে থাকা বিমা খাতকে সরিয়ে গতকাল লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিবিধ খাত। ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ খাতের ৯টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে চারটির।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিমা খাতের অবদান ছিল ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গতকাল এখাতের
৩১টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পায়। এর বিপরীতে সাতটির শেয়ারদর বাড়ে ও একটির অপরিবর্তিত থাকতে দেখা যায়।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের অবদান ছিল ১৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ৯ শতাংশ। গতকাল এ খাতের ২২টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এর বিপরীতে দর হারিয়েছে ৯টি কোম্পানি।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল আট দশমিক ৮২ শতাংশ। গতকাল এ খাতের ১৯টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে, সাতটির কমে ও ছয়টির অপরিবর্তিত থাকতে দেখা যায়।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের সবচেয়ে বেশি ৪০টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেনে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। আগের কার্যদিবসে পাঁচ দশমিক ৯৪ শতাংশ অবদান ছিল খাতটির। গতকাল সেটি দাাঁয় পাঁচ দশমিক ৯০ শতাংশে। এছাড়া এ খাতের ১৬টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে এবং তিনটির দর অপরিবর্তিত ছিল। গতকালের লেনদেনে আইটি, খাদ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত লেনদেনে এগিয়ে ছিল।
রোববার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, লভ্যাংশের কারণে কোম্পানির শ্রেণি উন্নত হলে মার্জিন ঋণ মিলবে। ওই নির্দেশনা জারির পর গতকাল বেড়েছে সূচক। আগের দিন ৭২ পয়েন্ট সূচক পতনের স্মৃতি নিয়ে সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সকালে লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। সাড়ে চার ঘণ্টার কোনো একটি সময়ও সূচক কমে লেনদেন হয়নি। তবে বেলা ১১টা ৩ মিনিটে আগের দিনের তুলনায় সূচক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হলেও দিন শেষে সেই অবস্থান ধরে রাখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।
গতকাল ডিএসইতে ৩৭৮ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১৯৬টির, কমেছে ১৪২টির ও ৪০টি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। ফলে সূচক বেড়ে ডিএসইএক্স বর্তমানে অবস্থান করছে ছয় হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইর অপর দুই সূচকেরও উত্থান হয়েছে। বাছাই করা কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচকটি ১৬ পয়েন্ট বেড়েছে। আর শরিয়াহ্ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসইএস বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় আট পয়েন্ট।
গতকাল সূচকে সবচেয়ে বেশি সাত দশমিক ৮৭ পয়েন্ট যোগ করেছে স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো। দুই দশমিক তিন শতাংশ
দর বৃদ্ধিতে কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে সাত দশমিক ১৫ পয়েন্ট। এছাড়া রবি, ম্যারিকো, ইউনাইটেড পাওয়ার, আইসিবি, ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকও সূচকে বেশ ভালো পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।