রহমত রহমান: দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বিদেশি, ব্যবস্থাপনা পরিচালকও বিদেশি। বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা ভালো, মুনাফাও প্রচুর। করোনা-পূর্ববর্তী ২০১৯ সালেও সিঙ্গার বাংলাদেশ রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে। বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও বাংলাদেশের আইনকানুনকে পাত্তা না দিয়ে বছরের পর বছর বিক্রির তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ-ভ্যাট) অনুসন্ধানে বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট ফাঁকির বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এনবিআর সূত্রমতে, সিঙ্গার মার্জ (একীভূত) হওয়া প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেডের নামে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়। অবৈধ রেয়াত নেয়ার জন্যই এই রিটার্ন জমা দেয়া হয়। কোম্পানি মার্জ হলেও ভ্যাট কমিশনারেটকে তা জানানো হয়নি।
এ সংক্রান্ত এনবিআর এর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির মূসক আইন অনুযায়ী পরিচালনার বিষয়ে ২৩ আগস্ট এলটিইউয়ের কমিশনারের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিঙ্গারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২৫ আগস্ট সিঙ্গার বাংলাদেশ এলটিইউকে এক চিঠিতে জানায়, উচ্চ আদালতের ১ ফেব্রুয়ারির এক নির্দেশনা অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেডকে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে মার্জ (একীভূত) করা হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এলটিইউয়ের সভায় এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। এলটিইউ জানতে পারে, একীভূত হওয়া প্রতিষ্ঠানের নামে সিঙ্গার প্রতিমাসে রিটার্ন দাখিল করে। বিষয়টি ঢাকা (পশ্চিম) ভ্যাট কমিশনারেটকেও জানানো হয়নি।
উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেডের বর্তমানে আইনগত কোনো অস্তিত্ব নেই। এটি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে একীভূত করায় বর্তমানে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড কেবল একটি লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গণ্য হবে। সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর বিদ্যমান কারখানা এলটিইউয়ের অধিক্ষেত্রাধীন হওয়ার কারণে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অপর একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিকানাধীন কারখানা একীভূত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, প্রকৃতি, পরিধি, মালিকানা ও অধিক্ষেত্র-সংক্রান্ত তথ্য মূসক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী এলটিইউ তত্ত্বাবধান করবে। কিন্তু সিঙ্গার এ বিষয়ে এলটিইউকে কোনো বিষয়ে অবহিত করেনি। কবে, কীভাবে একীভূত হয়েছে, আরজেএসসিতে তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না, তার কোনো প্রমাণ এলটিইউকে এখনও দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, সেহেতু কত তারিখে স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ এলটিইউকে দেয়নি। এছাড়া ভ্যাট পশ্চিমকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কি না, তার কোনো প্রমাণও দেয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এলটিইউ থেকে ঢাকা (পশ্চিম) ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন সাভার ভ্যাট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যাতে দেখা যায়, সিঙ্গার বাংলাদেশ আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ ও মূসক আইন লঙ্ঘন করে তথ্য গোপন করে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্সের নামে আগস্টেও ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করেছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একীভূত হওয়ার পর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্সের সব কার্যক্রম সিঙ্গার বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে এলটিইউতে পরিচালিত হবে। কিন্তু সিঙ্গার বাংলাদেশ মূলত ভ্যাট ফাঁকি দিতে এবং অবৈধ রেয়াত নিতে এ ধরনের অনিয়ম করে আসছে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেড মার্জ হওয়ার পরও কীভাবে রিটার্ন দেয়? অবৈধভাবে রেয়াত নেয়া ও ভ্যাট ফাঁকি দিতে মার্জ হওয়া প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করা হয়েছে কি না? এ বিষয়ে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আকরাম উদ্দিন আহমেদ , ‘এই প্রতিষ্ঠানটি এলটিইউয়ের অধীনে নয়, সেজন্য তারা জানে না। সব জানানো হয়েছে। এলটিইউ বললে তো হবে না।