ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় মালটা ও কমলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। চলতি বছর ওই উপজেলায় এ দুটি ফলের ভালো ফলন আশা করছেন বাগান মালিকরা। ফলন ভালো হলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে মালটা ও কমলা চাষে উৎসাহী হবেনÑএমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
সরকারের কৃষি বিভাগের ‘সাইট্রাস ভিলেজ প্রজেক্ট’-এর আওতায় মালটা, জাম্বুরা, কমলাসহ লেবু চাষ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে এসব ফলের চাষ করা হয়। চাষকৃত ফলের শতকরা ৯০ ভাগই মালটা। এখানে মালটার প্রায় ৩৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। সরকারিভাবেই কৃষকের মাঝে এসব চারা বিতরণ করা হয়। এ প্রজেক্টে বাগান রয়েছে ১২০টির মতো। এছাড়া বিভিন্ন বাড়িতে মালটার চারা রোপণ করা হয়। চলতি বছর ২৫টির মতো বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। বাকিগুলোয় আগামী বছর ফলন হবে বলে আশাবাদী কৃষকরা।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, এখানে বারি-১ মালটা ও কমলা, ডোরাকাটা মালটা, নাগপুরি কমলা, বাতাবিলেবু, কলম্বো লেবু ও জারা লেবুর চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর ও চম্পকনগর ইউনিয়নের প্রায় সব বাগানে মালটা, কমলাসহ অন্য ফলের চাষ হয়েছে। দু-তিন বছর বয়সী মালটা গাছের কোনো কোনোটিতে ১০০’র বেশি মালটা ধরেছে। কমলার ফলনও বেশ।
বাগান মালিকরা জানান, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে মালটা খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে মালটা কেনার জন্য পাইকারি ক্রেতারা বাগানে আসতে শুরু করেছেন। তবে কমলা খাওয়ার উপযোগী হতে অপেক্ষা করতে হবে।
কথা হয় বাগান মালিক উপজেলার নোয়াবাদী গ্রামের মো. ইসহাক, বিষ্ণুপুরের শিব্বির আহমেদ সরকার ও মেরাশানি গ্রামের সোহাগ ভূঁইয়ার সঙ্গে। মো. ইসহাক জানান, ৬২ শতাংশ জমিতে মালটা, কমলা, জাম্বুরা ও লেবুর চাষ করেছি। আগে ওই জমিতে বেগুনের চাষ করতাম। দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়ার আশা ও কম শ্রম দিতে হয় বলে এসব চাষ করেছি। শিব্বির আহমেদ সরকার বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের লোকজন এসব চাষে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সোহাগ ভূঁইয়া জানান, আমার ১৬২টি গাছের মধ্যে ৫০টিতে মালটার ফলন হয়েছে। কয়েকটি গাছে কমলাও ধরেছে।
বিজয়নগর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাদিউল ইসলাম ভূঁইয়া সুজন বলেন, অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে কৃষকদের মালটা ও কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। এখন কৃষকরাই বলছেন তারা খুশি। অনেকে এখন মালটা ও কমলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ ও মো. আশরাফুল দাবি করেন, তাদের আওতাধীন বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগানেও ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, আমরা প্রথমে শঙ্কায় ছিলাম। যদি ভালো ফলন না হতো, তাহলে কৃষক আমাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতেন। এখন তাদের মাঝে দারুণ আগ্রহ দেখছি। বিক্রি শুরু হলে অন্যান্য কৃষকও আগ্রহ দেখাবেন বলে মনে করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশকর আলী বলেন, মালটা বছরে দুবার ফল দেয়। এটি একটি লাভজনক ফল। মনে হচ্ছে বিজয়নগরে লিচু ও কাঁঠালের চেয়ে মালটার উৎপাদন ভালো হবে। এছাড়া কমলা, জাম্বুরা ও লেবুর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছি।
মো. আরিফুল ইসলাম মোল্লা