‘মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন তিন হাজার ৬০৪ বাংলাদেশি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী সম্প্রতি দেশটির মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ) কর্মসূচির আওতায় সেকেন্ড হোম গড়া বাংলাদেশিদের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেকেন্ড হোম গড়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি। দেশটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সেকেন্ড হোম গড়ার তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।
মাই সেকেন্ড হোম কর্মসূচি মূলত ভিনদেশি নাগরিকদের লক্ষ করেই গৃহীত। গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার সরকার ওই কর্মসূচিতে সংস্কার আনে। নতুন ব্যবস্থার আওতায় আবেদনকারীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। তিন স্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আবেদনকারীদের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে বিভক্ত করা। এই তিন স্তর হলোÑপ্লাটিনাম, গোল্ড ও সিলভার। নতুন নিয়মে প্লাটিনাম স্তরের আওতায় আবেদনকারীদের ৫০ লাখ রিঙ্গিত, গোল্ড স্তরে ২০ লাখ ও সিলভার স্তরে পাঁচ লাখ রিঙ্গিত স্থায়ী আমানত থাকতে হবে।
আর্থিক সক্ষমতা যাছাইয়ের সুবিধার্থে এই স্তরবিন্যাস করা হয় বলেই ধারণা। অনেক দিন ধরেই ‘ওপেন সিক্রেট’ যে, ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বেশি পছন্দ। দেশটিতে আবাসন গড়তে তারা কোটি কোটি রিঙ্গিত (স্থানীয় মুদ্রা) খরচ করছেন। বাংলাদেশ থেকে নেয়া এসব অর্থের উৎস নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের নেই কোনো জবাবদিহি। মূলত এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছেন আমাদের ধনকুবেররা। আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এ কারণে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ অভিজাত এলাকাগুলোয় বড় বড় কনডোমিনিয়ামের (ফ্ল্যাট বা উঁচু ভবনসহ অ্যাপার্টমেন্ট) মালিক অনেক বাংলাদেশির। সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক সুবিধার অনেক বাংলোর মালিকও তারা।
সক্ষমতা থাকলে যে কেউ যে কোনো দেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিরা বৈধভাবে ব্যবসা করছেন কি না, সে বিষয় জানা জরুরি। আমাদের দেশের চিহ্নিত অপরাধীরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। সে খাতে গিয়ে শপিংমলে কেনাকাটায় এবং ক্যাসিনোতেও দেদার অর্থ খরচ করেন। এ অর্থ দেশ থেকে বৈধ চ্যানেলে যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে অর্থ লগ্নি করে মালয়েশিয়ায় বাড়ি কেউ কিনছেন না। বরং তারা গোপনে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছেন। সেখানে হুন্ডি করে টাকা পাঠানো একেবারেই সহজ। নির্দিষ্ট হিসাবে টাকা জমা দিয়ে এখানে সেটা স্থানীয় মুদ্রা (রিঙ্গিত) হিসেবে নেয়া যায়। দেশটিতে বৈধ উপায়ে টাকা নেয়ার কোনো উপায় নেই। পাচারের বড় মাধ্যম হুন্ডি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং। মালয়েশিয়ার অনেক এলাকায় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ঘরে বসে, কিছু এলাকায় প্রকাশ্যে অফিস খুলে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালাচ্ছে। হয়তো বিদেশিদের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি ভালোই চাঙ্গা হচ্ছে। এদিকে আমাদের দেশ থেকে অসাধু ব্যক্তিদের অর্থ পাচার হচ্ছে, কিংবা অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে। সরকারের উচিত অবৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সেটি করা গেলে এমএম২এইচ কর্মসূচিতে বাংলাদেশিদের সম্পদের উৎস যাচাই করা সহজ হবে।