Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:52 pm

মালয়েশিয়া থেকে ব্যবহৃত গ্লাভস আমদানি এএমআরজে ট্রেডের

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশে সার্জিক্যাল মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভসের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের পকেট ভারী করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশীয় হাসপাতালের ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস পুনরায় ব্যবহার করছে। আবার কেউ বিদেশ থেকে পুরোনো গ্লাভস ও মাস্ক আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি পুরোনো গ্লাভস আমদানি করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের হাতে আটক হয়েছে।

ঢাকার এএমআরজে ট্রেড ইন্টারন্যাশানাল নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি নতুন সার্জিক্যাল গ্লাভস ঘোষণা দিলেও মালয়েশিয়া থেকে সাড়ে পাঁচ টন পুরোনো গ্লাভস নিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে, যা ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া কার্টনের গায়ে গ্লাভসগুলোর উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখও লেখা নেই। ফলে আনস্টাফিংকালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পণ্যগুলো আটক করে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তরার আমদানিকারক এএমআরজে ট্রেড ইন্টারন্যাশানাল মালয়েশিয়া থেকে ওয়ার্নো মেইট জাহাজে করে ১২২ কার্টনে সাড়ে পাঁচ টন সার্জিক্যাল গ্লাভস আমদানি করে, যা খালাসের জন্য আমদানিকারকের পক্ষে মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রাম বড়পোল মনসুর মার্কেটের মনজুমা এন্টারপ্রাইজ ১২ অক্টোবর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে।

বিল অব এন্ট্রিতে দেখা যায়, পণ্যের বিবরণে আমদানিকারক গ্লাভস অব ভ্যালকনাইজড রাবার (সার্জিক্যাল গ্লাভস) উল্লেখ করে, যার আমদানি মূল্য সাড়ে ছয় হাজার মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০ টাকা দেখানো হয়। এর বিপরীতে ৫০ শতাংশ হরে শুল্ক আসে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭১৬ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সেকশন ৭(বি)-এর অধীনে আমদানি হওয়া পণ্যগুলো বন্দরের অভ্যন্তরে জেটিতে আনস্টাফিংকালে দেখা যায়, আমদানিকৃত সার্জিক্যাল গ্লাভসগুলো পুরোনো অর্থাৎ ব্যবহƒত।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আনস্টাফিং শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার পূরবী সাহা বলেন, ‘মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যগুলো কায়িক পরীক্ষাকালে খুলে দেখা হয়। এ সময় দেখা যায় পণ্যগুলো পুরোনো, যা আগের ব্যবহৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই ছাড় করার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

পুরোনো গ্লাভস পুনরায় ব্যবহার সম্পর্কে জানতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সীমান্ত ওয়াদ্দাদার সঙ্গে কথা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুরোনো বা ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস পুনরায় ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এগুলো ওয়ান টাইম ব্যবহার করতে হয়। পুনরায় ব্যবহার করতে গেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে।’

এদিকে পুরোনো গ্লাভস আমদানির বিষয়ে জানতে এএমআরজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জমা খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়া থেকে সম্পূর্ণ নতুন গ্লাভস আমদানি করেছি। ব্যবহƒত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা বাংলাদেশ নয়! যে কোনো জায়গা থেকে পুরোনো গ্লাভস কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে দেবে! সেখানে পুরোনো গ্লাভস কোথায় পাওয়া যাবে? পণ্যগুলো বড় কার্টনের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশে এনে পণ্যের উৎপাদন ও এক্সপায়ার ডেট বসানো হবে। পণ্য চালানটি পুনরায় কায়িক পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছি।’

পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মনজুমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাসিমা আকতার শেয়ার বিজকে জানান, ‘এই আমদানিকারকের সঙ্গে পণ্য খালাসের এটাই প্রথম চুক্তি ছিল। পুরোনো গ্লাভস আমদানির বিষয়ে আমদানিকারক আমাদের কিছুই জানায়নি। কায়িক পরীক্ষাকালে আমাদের কাস্টমস সরকার নাজমুল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দেখা গেছে পণ্যগুলো পুরোনো। তবে আমদানিকারক পণ্যগুলো পুনরায় কায়িক পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে পুরোনো গ্লাভস আমদানির কোনো সুযোগ নেই। আমদানিকারক আদেশ অমান্য করেছে। এই ফরমেটে কেউ পণ্য আমদানি করে না। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের গায়ে উৎপাদন তারিখসহ বিভিন্ন তথ্য থাকতে হয়। কিন্তু এই চালানে কোনোটিই পালন করা হয়নি। তাই আমদানি আদেশ অমান্য ও অদেশবহির্ভূত পণ্য আমদানি করায় পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করাসহ জরিমানা করা হবে।’