নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ফলমুন্ডির ফল ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশলে আবারও মাল্টার দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা করছে। জেলা প্রশাসনের অভিযানের দুই দিনের মাথায় নতুন কৌশল অবলম্বন করে অসৎ ব্যবসায়ীরা। তারা আড়ত থেকে মাল্টা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোল্ড স্টোরেজে। আর সেখান থেকেই ভুয়া রশিদে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে এসব মাল্টা।
চট্টগ্রাম ও ঢাকাভিত্তিক মাল্টা আমদানিকারকরা আমদানি মূল্য সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করে পাঠিয়ে দিচ্ছে ফলমুন্ডিতে। দেওয়া হচ্ছে না আড়তদারকে সরবরাহ মূল্য সংক্রান্ত কোন তথ্য। এতে কমিশন এজেন্ট, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা যোগসাজশ করে মাল্টা এখনো বেশি দামে বিক্রি করছে। যদিও মাল্টার গড় আমদানি খরচ ৬৫-৭০ টাকা (সকল খরচ সহ)। সে হিসেবে পাইকারিতে দাম হওয়ার কথা কেজি প্রতি ৮০-৮৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৯০-৯৫ টাকা। কিন্তু তারা ভুয়া রশিদে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি করছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, আজকের অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী রেয়াজুদ্দিন বাজারে মনিটরিং করেন। সেখানকার ব্যবসায়ীদেরকে মাল্টার খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত মূল্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বলেন, ফলমুন্ডির ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের চাপে আমদানিকারক এবং কমিশন এজেন্টদের সাথে যোগসাজশ করে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করছেন। এরপর ভোরবেলা কোল্ড স্টোরেজ থেকে মাল্টা এনে প্রতি কার্টুন ২৪০০ টাকা দরে (প্রতি কেজি ১৬০ টাকা) বিক্রি করছে। কিন্তু রশিদ দিচ্ছে ১৫০০ টাকার। এমনকি কিছু অসাধু আড়তদার রশিদ ছাড়া বাকিতে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে মাল্টা দিয়ে দিচ্ছে। অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে পরে যাতে তাদেরকে মূল্য পরিশোধ করে।

আর ফলমন্ডি এলাকায় অভিযানে গেলে দেখা যায়, অধিকাংশ মাল্টা ব্যবসায়ীরা দোকান কৌশলে মাল্টা বিহীন করে অন্যান্য ফল বিক্রি করছেন। রেয়াজুদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা খোকন মিয়ার সূত্র ধরে ফলমুন্ডির আল-আমিন ট্রেডার্স এ অভিযান করা হলে ঐ আড়তের ম্যানেজার সুমন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিকট স্বীকারোক্তি দেন যে, মূলত তারা কোল্ড স্টোরেজে মাল্টা সরিয়ে রেখেছেন। কৌশলে তারা চট্টগ্রাম ও ঢাকাভিত্তিক মাল্টা আমদানিকারক চক্রের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে কমিশন এজেন্ট, ব্রোকার, অসাধু কোল্ড স্টোরেজ, আড়তদার, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে মাল্টার দাম বেশি রাখছেন। এসময় আল-আমিন ট্রেডার্স এর মালিক মোঃ আলী হোসেন মার্কেট থেকে পালিয়ে যান। পরে আড়তের ম্যানেজারকে আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অব্যাহত অভিযানের পরও ফলমুন্ডি বাজার ফল ব্যবসায়ী সমিতি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের সমিতির ব্যর্থতার বিষয়ে মুচলেকা আদায় করেন। চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে সভাপতি আবদুল মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর যৌথভাবে ফল ব্যবসায়ীদের নতুন অপকৌশলের বিষয়ে সাক্ষ্যমূলক মুচলেকা দেন। তবে যেসকল ফল ব্যবসায়ী এ অভিনব কারসাজিতে যুক্ত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে।
এছাড়া অভিযান চলাকালে, চিটাগাং ফল বাণিজ্য (প্রাঃ) লিঃ, জি.এস ট্রেডিং, মেসার্স নুবাইদ, ইব্রাহিম এন্টারপ্রাইজ সবাই অফিস ফেলে পালিয়ে যান। মেসার্স এন.এস ফ্রুটস ইন্টারন্যাশনাল এর অফিস খোলা পাওয়া গেলেও সেখানে দোকানের এক কর্মচারী পাওয়া যায়। যিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত কে জানান তার মালিক ঐ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করলেও সেখানে কোনো মাল্টা/ফল আমদানির কোনো দাপ্তরিক কাগজপত্র নাই। এরপর আরেকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রতীয়মান হয় , প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়ার জন্য আমদানিকারক সম্প্রতি দোকানের স্যাটারের সামনে যে স্থানে প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকে সেটি কৌশলে কেঁটে ফেলেছেন।

ফলমন্ডির বাজারে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে এমন কয়েকজনের তথ্যমতে ফলমুন্ডির ব্যবসায়ীরা মাল্টার পাশাপাশি আঙ্গুরের দাম বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে। এর জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছে। মূলত আগে বন্দর থেকে ফল খালাস করেই সেগুলো ফলমন্ডি বাজারে নিয়ে আসতো। যা ফলমন্ডি থেকে দ্রুত বিক্রি করে দিতো। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের কঠোর মনিটরিং থাকায় ফল ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের সাথে আঁতাত করে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ফলের বাজার অস্থির করতে চাইছে। তবে ফলমুন্ডি থেকে নিয়মিত ফল কিনেন এমন কয়েকজন জানান, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ যেভাবে কাজ করছেন এ করোনাদুর্যোগে এবং রমজানে বাজার মনিটরিং এর ক্ষেত্রে তাতে ব্যবসায়ীদের সকল অপকৌশলই ধরা পড়বে।

আজ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেইসব খুচরা ব্যবসায়ীদেরকে স্টেশন রোড এলাকার ফলমুন্ডিতে নিয়ে যান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। সেনাবাহিনী এবং সিএমপি সদস্যদের সহযোগে আরেক দফা অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলাম এবং গালিব চৌধুরী। সেনাবাহিনীর টহল টিমের লিডার ছিলেন ক্যাপ্টেন রাকিব।
উল্লেখ্য. এর আগে গত ২৯ এবং ৩০ এপ্রিল এবং ৩ মে তিন দফা ফলমন্ডিতে অভিযান চালিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রথম দুই দফার অভিযানে আমদানি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে মাল্টা বিক্রির দায়ে আট জন ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।