যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধাবিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু করা যায়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
বাংলাদেশে মাশরুম এখনও লাভজনক কৃষিজপণ্য হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। তবুও মাশরুম চাষ করে চলেছেন চাষি।
জানা গেছে, পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক মানুষ জুম বা ফল চাষের পাশাপাশি বাড়ির ছোট্ট আঙিনায় মাশরুম চাষ করছে। অনেকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ, মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কিংবা যুব উন্নয়ন থেকে মাশরুম চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে মাশরুম চাষ করছেন। কেননা, কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক আয় করতে চাইলে মাশরুম চাষের বিকল্প নেই।
মাশরুম চাষ করে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করেছেন রাঙামাটি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা শহরের রাঙাপানি এলাকার বাসিন্দা পলাশ কুসুম চাকমা। তিনি পরিবারের সহযোগিতায় দুবছর ধরে মাশরুম চাষ করছেন। আর্থিকভাবে এখন বেশ স্বাবলম্বী তিনি।
কথা হয় জনপ্রতিনিধি পলাশ কুসুম চাকমার সঙ্গে। শত ব্যস্ততার মাঝেও তার সফলতার গল্প শোনালেন। বলেন, পাহাড়িরা প্রকৃতভাবে চাষাবাদনির্ভর পরিশ্রমী জাতি। সারা বছর জুম চাষ, ফল চাষ, শূকর পালন প্রভৃতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। পাশাপাশি পাহাড়িদের জনপ্রিয় একটি খাবার মাশরুম।
শখ করে একদিন বাড়ির খালি জায়গায় মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। দেখেন, অল্প জায়গায় ভালো উৎপাদন হয়। তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য স্থানীয় মাশরুম কেন্দ্র থেকে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের পরিপূর্ণতা পেতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন। তাদের পরামর্শে ২০১৬ সালের শেষদিকে বাড়ির পরিত্যক্ত পাঁচ শতক জায়গার ওপর শেড তৈরি করে গড়ে তোলেন মাশরুম খামার। পুঁজি ৫০ হাজার টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উৎপাদনের প্রথম ধাপে দেড় লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
উন্নত জাতের মাশরুম বীজ সংগ্রহ করেন স্থানীয় সরকারি মাশরুম সেন্টার থেকে। প্রিয় টু, প্রিয় টেন, এসকে ও ডব্লিউ জাতের বীজ ব্যবহার করেন তিনি। মাশরুম থেকে বছরে তার আয় তিন লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে সোনালি জাতের মুরগির খামার গড়ে তোলেন। এ খামারে বর্তমানে ৫০০ মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে মুরগিগুলো ১০০ থেকে ১২০টি ডিম দিয়ে থাকে। মাশরুম আর মুরগির খামারের আয় দিয়ে বেশ ভালো আছেন বলে জানান এই সফল খামারি পলাশ কুসুম চাকমা। তার কাজে স্ত্রী তারা বীণা চাকমা ও শ্যালিকা সন্ধ্যা রানী চাকমা সহযোগিতা করেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া জানান, মাশরুম চাষে আমাদের প্রধান সমস্যা হলো, এর গুণাগুণ ও সবজি হিসেবে মাশরুম যে একটি অনন্য খাবার হতে পারে, তা প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়াতে পারিনি। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে রয়েছি।
জানা গেছে, মাশরুম উৎপাদনের পাশাপাশি এর নানা অসুবিধা দূর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
মঈন উদ্দীন বাপ্পী, রাঙামাটি