Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:27 pm

মাস্কমেলন চাষে বিপুল সম্ভাবনা

ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশসহ এশিয়ার জাপান, ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় মাস্কমেলন। বাংলাদেশেও এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থকরী এ ফলটির চাষাবাদের উপযোগিতা মিলেছে। গবেষকদের আশা, বাংলাদেশে এ ফল চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলটি কৃষকের জন্য লাভজনক ও সম্ভাবনাময় হবে বলে মনে করছেন তারা। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিযোজনে সফলতা পেয়েছেন এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
জানা গেছে, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ড. মাহবুবুর রহমান প্রায় এক দশক জাপানে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় কিছু মাস্কমেলনের বীজ নিয়ে আসেন। তিন বছর গবেষণা করে বাংলাদেশের মাটিতে ওই ফল উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেন তিনি। ফলটি বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজাবাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
কিউকারবিটেসি পরিবারের বাঙ্গি-জাতীয় একটি ফল মাস্কমেলন। এটি জালিকার ত্বকযুক্ত গোলাকার ফল। ওজন ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম হয়ে থাকে। বীজ রোপণের ১১০ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এ ফলের প্রায় ৩০০টি জাত রয়েছে। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে, যা হজমশক্তি বাড়ায়। ফাইবার গ্লুকোজ থাকায় রক্তের সঙ্গে মেশে না। ফাইবার-সমৃদ্ধ শর্করা থাকায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এ ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের খেতে কোনো বাধা নেই। ফলটি রক্তচাপ ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্বাদু এ ফলটি একই সঙ্গে ভিটামিন এ, বি ও সি সমৃদ্ধ। ফলে দৃষ্টিশক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতি ১০০ মিলিতে রয়েছে ৫৩ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন এক গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার এক গ্রাম, সোডিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪১৭ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিনয়েড ৩২ দশমিক ১৯ মাইক্রোগ্রাম।
ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। আমি মন্ত্রণালয়ে এর মধ্যেই প্রজেক্ট সাবমিট করেছি। অনুমোদন পেলে গবেষণার পথ সুগম হবে। বাংলাদেশে এ ফলের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঔষধি গুণসম্পন্ন এ ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরুর আশা প্রকাশ করছেন তিনি। এটি চাষ করে ভিটামিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মাত্র এক বিঘা জমিতে চার থেকে পাঁচ মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, অনেকে অভিযোজনের চেষ্টা করেছেন, সফল হননি। আমরা বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিযোজনে সফলতা পেয়েছি। এবার দেশীয় জাতের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে গবেষণা করব। বরেন্দ্র অঞ্চলের পাশাপাশি বাংলাদেশের সবখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবিএম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে এ ফল রফতানিও করা যাবে।

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ