বর্তমান সরকার ২০১০ ও ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ খাতের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে। তবে বিলাসী সেসব মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে হোঁচট খায় সরকার। এতে সংশোধন করা হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। এজন্য সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) ২০২৩-এর খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়ার কপি শেয়ার বিজের কাছে এসে পৌঁছেছে। এর খুঁটিনাটি নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজ ছাপা হচ্ছে শেষ পর্ব
ইসমাইল আলী: বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। ২০৫০ সালে তা বাড়িয়ে এক লাখ ১১ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রস্তাবিত ‘সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) ২০২৩’-এর খসড়াতে। অর্থাৎ ২৮ বছরে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হবে প্রায় ৩৭৩ শতাংশ। বিলাসবহুল এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেই ব্যয় করতে হবে প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ডলার।
মাস্টারপ্ল্যানের তথ্যমতে, ২০৩০ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৩৮ হাজার ৮৯৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ আট বছরে সক্ষমতা বাড়াতে হবে ১৫ হাজার ৪১৩ মেগাওয়াট। বাড়তি এ সক্ষমতা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করতে হবে ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, কয়লার কেন্দ্রগুলোর জন্য ১১ দশমিক ৩ বিলিয়ন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সাত বিলিয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোর জন্য তিন দশমিক ১ বিলিয়ন এবং তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য শূন্য দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে দুই দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে ২০৩০ সালের পরে।
একইভাবে ২০৪১ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৭৪ হাজার ২৫৩ মেগাওয়াট। অর্থাৎ পরবর্তী ১১ বছরে সক্ষমতা বাড়াতে হবে ৩৫ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট। বাড়তি এ সক্ষমতা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করতে হবে ৫৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, কয়লার কেন্দ্রগুলোর জন্য ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ছয় দশমিক ৬ বিলিয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোর জন্য ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন এবং তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অ্যামোনিয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে দুই দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ও হাইড্রোজেনচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এক দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া কার্বন ক্যাপচার স্টোরেজ (সিসিএস) প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ লাগবে আট দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ২০৫০ সাল নাগাদ অর্থাৎ শেষ ৯ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে ৩৬ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট। বাড়তি এ সক্ষমতা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করতে হবে ৬৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ব্যয় হবে ২৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ছয় দশমিক ৬ বিলিয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোর জন্য ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া হাইড্রোজেনচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এক দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং সিসিএস প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগ লাগবে ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
যদিও বিশাল এ বিনিয়োগ আসবে কোথা থেকে তা মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়নি। এছাড়া এ ধরনের বিলাসী বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে দেশের জন্য বোঝা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) সদস্য সচিব হাসান মেহেদী শেয়ার বিজকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিলে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমে যাবে। কারণ প্রতি কিলোওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে বর্তমানে গড়ে এক হাজার ৪৮০ ডলার। অথচ প্রতি কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে গড়ে ব্যয় হয় ৬২৩ ডলার। অর্থাৎ প্রায় আড়াইগুণ বিনিয়োগ ব্যয় দরকার।
তিনি আরও বলেন, সৌর বা বায়ু বিদ্যুতে প্রাকৃতিক শক্তিকে ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে। এছাড়া নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জও নাই। তাই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিনিয়োগ চাহিদা কমাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রতি জোর দিতে হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও এগুলোয় প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে আরও ১৮০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়েছে।