নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় গতকাল মধ্যরাত থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সমন্বিত বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৩৮টি জেলায় এ বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য দপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সমন্বিতভাবে এ অভিযান পরিচালনা করবে।
গতকাল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অভিযান বাস্তবায়নকালে ২০টি জেলা ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বাগেরহাটের নদ-নদী, মোহনা ও সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
অন্য ১৮টি জেলা নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, জামালপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুষ্টিয়া ও নড়াইলের নদ-নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে।
গতকাল সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদের সভাপতিত্বে এ-সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মো. তৌফিকুল আরিফ ও এসএম ফেরদৌস আলম, যুগ্ম সচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ ও নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম সভায় অংশ নেন।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সংশ্লিষ্ট ৩৮ জেলার ডিসি ও পুলিশ সুপার, মৎস্য অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, র্যাব এবং মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইলিশ মাছকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মৎস্য বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন সময় বিবেচনা করে এ বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সচিব আরও বলেন, ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকাকালে এ বছর পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইলিশ ধরা বন্ধকালে যাতে পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা অবৈধ মৎস্য আহরণ করতে না পারে, সেজন্য কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
সভায় জানানো হয়, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে এ বছর ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নৌ-পুলিশ এ বছর নদীতে ভাসমান ফাঁড়ি পরিচালনা করবে এবং সার্বক্ষণিক একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু রাখবে। বিমানবাহিনী আকাশপথে নজরদারি গত বছরের চেয়ে বৃদ্ধি করবে এবং রাতের বেলা টহল জোরদার করবে। নৌবাহিনী ৯টি জাহাজের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভারতীয় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করবে, যাতে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরতে না পারে। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বরফকল বন্ধ রাখা, বাজার মনিটর এবং স্থানীয় মৎস্যজীবী, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতা ও প্রচারণামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণে বাধা দিলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে সভায় জানানো হয়। “