Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:11 am

মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ডাবল গেইন পাবেন বিনিয়োগকারীরা: শিবলী রুবাইয়াত

## বিজনেস ম্যানদের কাছে এখনো তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যেতে পারি নাই: মোস্তফা জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন,  ভারতে যেমন মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে, বাংলাদেশেও ঠিক সেভাবেই মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার ফলে তৈরি হয়েছে গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড। এই ফান্ডকে পরিচালনার জন্য এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা কখনোই কমবে না। এটা দিনে দিনে বাড়বে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত এই ফান্ডে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন নেওয়া। এই ফান্ডে থেকে বিনিয়োগকারীরা ডাবল গেইন পাবেন বলে জানান তিনি।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) আয়োজিত ‘আউটকাম অব রেজাল্ট অরিয়েন্টেড আইসিটি ওয়ার্কসপ অ্যান্ড ইনঅগুরেশন অব গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড (জিজেএমএফ)’-শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সভাপতিত্ব করেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও সিএমএসএফ ফান্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার হলো অর্থনীতির আয়না। আজ যদি শুনেন লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ক্রাশ করেছে, বুঝতে পারবেন যে সেখানের অর্থনীতিতে কোন ঘটনা ঘটে গেছে। আর যদি শুনেন উইন হয়েছে, বুঝে ফেলবেন সেখানের অর্থনীতিতে শু-বাতাস বইছে। এসময় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ২০২০ সালের মে মাসে করোনা মহামারি সময় আমরা বিএসই‌সির দা‌য়িত্ব নিয়েছি। তখন পুঁজিবাজার বন্ধ ছি‌লো। ইনডেক্স ছয় হাজার থেকে কমে অবস্থান কর‌ছিল ৩ হাজারের ঘরে। সেখান থে‌কে আমরা গুড গভর্ন্যান্সকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু ক‌রি। তখন মানুষ আস্থা পেতে শুরু করে। আমরা দেখেছি, মানুষ গর্ভন্যান্সকে ‍খুব পছন্দ করে। তারা চায়, আইনের প্রয়োগ, ব্যবহার ও বিনিয়োগের নিরাপত্তা। আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। আজ পর্যন্ত যত বিষয় নিয়ে তাদের কাছে গিয়েছি, কোন বিষয়েই তারা হ্যাঁ বলেছেন, একটাও না বলেননি।

মিউচুয়াল ফান্ড বিষয়ে তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডকে বলা হয় বাজারকে স্থিতিশীল রাখার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। পরে সবাইকে বললাম মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। ভারতে মিউচুয়াল ফান্ড জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ড আছে-এটা কেউ জানেই না। এখানে এখন যে ১০ শতাংশ নিরাপদ রিটার্ন পাচ্ছে-এটা তো কেউ জানেই না। আজকে মিউচুয়াল ফান্ড মোটামুটি একটা জায়গায় এসেছে। দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, জিডিপির যে আকার, আমাদের অর্থনীতির সামনের যে ভবিষ্যত, আমরা এ নিয়ে কাজ করলে জিডিপিতে এই সেক্টরের অবদান এখন যে ১৯-২০ শতাংশ, তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। আমরা মানি মার্কেটের সাথে একসঙ্গে কাজ না করলে কখনো দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। রাজস্ব খাতের টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্বের প্রথমেই অভিযোগ আসে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড পায় না। তাহলে ডিভিডেন্ড কোথায় যায়, এটা জানতে সব কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়। কোম্পানিগুলো বলে ডিভিডেন্ড নেওয়ার জন্য লোক ও সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায় না। কিন্তু জানা যায় ডিভিডেন্ডগুলো কোম্পানিগুলোর কাছে রয়ে গেছে। যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। কোম্পা‌নিগুলোর কাছে পড়ে থাকা এই ডি‌ভিডেন্ডের টাকা দিয়ে আইসি‌বির কাস্টোডি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফান্ড গঠন করা হয়। যার নাম ক‌্যা‌পিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড। এখন পর্যন্ত এই ফান্ডে ৫০০ কো‌টি টাকার মতো জমা পড়েছে। এই টাকাটা সরকারের এক‌টি সংস্থার কাছে রেখে য‌দি ব‌্যবহার করা যায়, তাহলে পুঁজিবাজারের তার‌ল‌্য সংকট কিছুটা দূর হ‌বে।

মিউচুয়াল ফান্ড প্রসঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ভারতে যেমন মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে, বাংলাদেশেও ঠিক সেভাবেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার ফলে তৈরি হয়েছে গোল্ডেন জুবিলি ফান্ড। এই ফান্ডকে পরিচালনার জন্য এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা কখনোই কমবে না। এটা দিনে দিনে বাড়বে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিৎ এই ফান্ডে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন নেওয়া। এই ফান্ডে থেকে বিনিয়োগকারীরা ডাবল গেইন পাবে বলে জানান তিনি। এই ফান্ড অনেক ভালো করবে। কারণ এই ফান্ডের পরিচালনায় যারা রয়েছেন, তারা সকলে খুবই দক্ষ ও অভিজ্ঞ।

অপরদিকে, দেশের বিভিন্ন খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আর্থিক খাতগুলো ডিজিটালাইজেশনের দিক থেকে খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থার বিপ্লবের নাম মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। বাংলাদেশে দরিদ্র লোকজনও তাদের ফোন দিয়ে সমস্ত লেনদেন করে থাকে না। কিন্তু আমাদের বিজনেস ম্যানদের কাছে এখনো তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যেতে পারি নাই। তবে এটা আনন্দের বিষয় যে, আমাদের অর্থখাতের একটি শ্রেষ্ঠ জায়গা স্টক এক্সচেঞ্জ, সেই খাতের একটা ফান্ডকে উপলক্ষ করে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবস্থাপনার দিকে যে গুরুত্ব দেখলাম, এটা আমাকে অভিভূত করেছে। মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও কিন্তু ডিজিটালাইজেশনে অনেক দ্রুত এগিয়ে গেছে। এখনকার দিনে আমি কেবল স্টক এক্সচেঞ্জের কথা বলছি না, ব্যবসা কিংবা শিল্প কলকারখানা সকল ক্ষেত্রেই যদি ম্যানেজমেন্টের কথাটা বলেন, তাহলে প্রথমেই ভাবতে হবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন কি না?

আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, তথ্য বা ডেটা সোনার চায়তেও দামি, তেলের চায়তেও দামি। এখনকার পৃথিবী তথ্যের ওপর নির্ভর করে। এই তথ্য আপনার পক্ষেও কাজ করতে পারে, বিপক্ষেও কাজ করতে পারে। আমি খুব খুশি হয়েছি যে, এই ডেটা (জিজেএমএফ সংক্রান্ত) বাংলাদেশের ভেতরেই থাকবে। আমি আরেকটু স্পেসিফাই করবো, বাংলাদেশের ভেতরে না আপনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনারা অন্যের নিয়ন্ত্রণে তথ্য রেখে এটা থেকে উপকারের চেয়ে বিড়ম্বনায় বেশি পড়বেন। আর আর্থিক খাত অপরাধের বড় ক্ষেত্র। অতএব এই জায়গাতে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে জনগণের ক্ষতি হবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা খুব কঠিন।

সভাপতির বক্তব্যে নজিবুর রহমান বলেন, আমাদের ফান্ডের বয়স মাত্র চার মাস। আমাদের বলা হয়েছে, বছরে ছয়টি সভা করতে হবে। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা ১৩-১৪টি সভা করেছি। আমাদের সব কাজ হবে খুবই স্বচ্ছ। আর এই ফান্ডের মূল চালিকা শক্তি হবে তথ্য-প্রযুক্তি। আমরা সব জায়গায় সবার সঙ্গে সমন্বয় করছি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করা হচ্ছে, ম্যানেজমেন্ট অফিস নেয়া হয়েছে। আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পার্টনারশীপ গড়ে তোলার কাজ করছি। সিএমএসএফ যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য সাধনে আমরা প্রস্তুত থাকবো।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে কী নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সিএমএসএফ-এর বোর্ড অব গভর্নেন্স সদস্য ড. মোহাম্মদ তারেক। এছাড়াও স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির। অনুষ্ঠানে সিএমএসএফ ফান্ডের উদ্বোধন করা হয়।

###