সাইমউল্লাহ সবুজ: কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে ভালো করতে পারছে না মিউচুয়াল ফান্ডগুলো। কয়েকটি ইউনিট ফান্ডের দর অভিহিত মূল্যের ওপর থাকলেও বেশিরভাগের অবস্থা খারাপ। এতে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সার্বিক বাজারমূল্য ক্রয় মূল্যের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তথ্যে দেখা গেছে, গত জুন পর্যন্ত ৩৬টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ও ৮৭টি বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ছিল। ফান্ডগুলোর সম্মিলিত ক্রয় মূল্য (কস্ট প্রাইস) ছিল ১২ হাজার ২৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তবে গত জুন শেষে তা কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৯৬ কোটি ২৭ লাখ টাকায়। এ হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বাজারমূল্য (মার্কেট প্রাইস) কমেছে প্রায় ৯৪৩ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
বিএসইসির তথ্য বলছে, তালিকাভুক্তির সময়ের মূল্য বিবেচনায় ৮৭টি বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্মিলিত ক্রয় মূল্য ছয় হাজার ৬০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই ফান্ডগুলোর জুন শেষে বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এগুলোর দাম কমেছে ৬৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা।
অন্যদিকে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্মিলিত ক্রয় মূল্য ছিল ছয় হাজার ১৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই ফান্ডগুলোর জুন শেষে বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। এগুলোর দাম কমেছে ৩০৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বিএসইসিতে গত জুন পর্যন্ত ৬৪টি প্রতিষ্ঠান সম্পদ ব্যবস্থাপক এবং ২৭টি প্রতিষ্ঠান তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে গত জুন শেষে ৩৮টি সম্পদ ব্যবস্থাপক এবং ৯টি তহবিল ব্যবস্থাপক সক্রিয় রয়েছে। আর ২৬টি সম্পদ ব্যবস্থাপক এবং ১৮টি তহবিল ব্যবস্থাপক নিষ্ক্রিয় রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজারে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে অধিকাংশ ফান্ডের ইউনিটপ্রতি বাজারমূল্য অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ৩৬টি মেয়াদি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৯টি মেয়াদি ফান্ডের ইউনিটপ্রতি বাজারমূল্যের চেয়ে অভিহিত মূল্য বেশি। ফান্ডগুলোর মধ্যে সম্প্রতি সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধি প্রবণতা দেখা যায় প্রাইম ফাইন্যান্স ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট মূল্যে। গতকাল বুধবার শেয়ারটির দর ৩০ টাকা ছাড়ায়। অবশিষ্ট মেয়াদি ফান্ডের ইউনিটপ্রতি বাজারমূল্য অভিহিত মূল্যের চেয়ে কম। অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা প্রায় সব ফান্ডই ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় লেনদেন বন্ধ রয়েছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ প্রবণতা বেশি। এতে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মূলধন সংকট রয়েছে। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর পারফরম্যান্সও ভালো না। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড নির্দিষ্ট সময়ে সমাপ্ত হচ্ছে না, উল্টো সময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আবার কিছু ফান্ডের আকার বাড়ানো হচ্ছে, যা খারাপ অভ্যাস।
মিউচুয়াল ফান্ডের সংকট উত্তরণের আপাতত সুযোগ নেইÑমন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে ফ্লোর প্রাইসের মাধ্যমে বাজার এক প্রকার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানে মিউচুয়াল ফান্ডের সংকট উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই।