Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 9:21 pm

মিউচুয়াল ফান্ডে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিনিয়োগের জন্য অনেকটা নিরাপদ হিসেবে অভিহিত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো। বর্তমানে ৭৮ শতাংশের বেশি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর রয়েছে অভিহিত দরের নিচে। অর্থাৎ বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে এসব ফান্ডের ইউনিট। এরপরও এসব ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই।
বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভালো রিটার্ন না পাওয়ায় এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে গেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। তালিকাভুক্ত ৭৮ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়ায় এগুলোর দর আরও কমছে। অথচ একসময় তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে ছিল।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যখন ধস নামে, তখন অন্যান্য খাতের সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডও মুখ থুবড়ে পড়ে। কমে যায় তালিকাভুক্ত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য খাত ঘুরে দাঁড়ালেও কোনো গতি হয়নি মিউচুয়াল ফান্ডের।
বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধনের মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ অবদান মিউচুয়াল ফান্ডের (মেয়াদি ও বেমেয়াদি মিলে)। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বাজার মূলধনে মিউচুয়াল ফান্ডের অবদান ২০ শতাংশেরও বেশি। আর বিশ্বব্যাপী উন্নত পুঁজিবাজারগুলোর বাজার মূলধনে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অবদান মিউচুয়াল ফান্ডের।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সবার আগে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। কারণ ভালো কোম্পানি না থাকলে সেখানে কেউ-ই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। আমাদের পুঁজিবাজারে চাহিদার তুলনায় ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। বাজারের স্বার্থে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির বিকল্প নেই।’
এদিকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করছে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, সংশ্লিষ্টদের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। তবে বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল না হলে এই খাতের চাহিদা বাড়বে না বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যে যত কথাই বলুক না কেন পুঁজিবাজারে সবাই আসে লাভ করার জন্য। সে ক্ষেত্রে ফান্ডগুলো যদি লাভ না করতে পারে তাহলে অবশ্যই তারা পুঁজিবাজারবিমুখ হবে। তাই ফান্ডগুলো বাজারে রাখতে হলে আগে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজিবাজার ভালো রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ফান্ডগুলো বাজারকে সাপোর্ট দিতে পারলে মার্কেট আরও গতিশীল হতে পারবে।
একই প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘ফান্ডগুলো মূলত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এখান থেকেই তাদের আয় হয়। বাজার ভালো থাকলে ফান্ডগুলো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। আবার নিম্নমুখী থাকলে বা অস্থিতিশীল থাকলে তাদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমে যায়। ২০১০ সালের পর থেকে বাজার টানা স্থিতিশীল নেই। সে কারণে হয়তো ফান্ডগুলো ভালো করতে পারছে না। আর এর জের ধরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও কমে গেছে।