মিথুনের লড়াইয়ের পরও বাংলাদেশের আক্ষেপ

ক্রীড়া ডেস্ক: অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পুরোনো রোগ। সেটা ভালো করেই জানে পাকিস্তান। গতকাল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিনে তাই স্বাগতিক পেসাররা বেশিরভাগ সময়ই করেন অফ স্টাম্পের বাইরে বল। এ ফাঁদে অবশ্য পা দিতে ভুল করেননি অভিষিক্ত ওপেনার সাইফ হাসান, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্তরা। একটা সময় তাই সফরকারীদের স্কোর বোর্ডে ২০০ রান জমা হওয়া নিয়ে জেগেছিল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মোহাম্মদ মিথুন ও তাইজুল ইসলামের সপ্তম উইকেট জুটির দৃঢ়তায় সে লক্ষ্যমাত্রা টপকে যায় টিম টাইগার্স। তবে দিন শেষে বড় স্কোর গড়তে না পারার আক্ষেপটা কিন্তু ঠিকই থেকে যায় রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের। 

১৭ বছর পর পাকিস্তানে গতকাল টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের এ সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনে সফরকারীরা গুটিয়ে যায় মাত্র ২৩৩ রানে। মোহাম্মদ মিথুন ৬৩, নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৪ ও লিটন দাস করেন ৩৩ রান। আলো স্বল্পতার কারণে গতকাল দিনের শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেনি পাকিস্তান। 

রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে সব সময় পেসাররাই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু গতকাল সেখান থেকে আহামরি সুবিধা আদায় করে নিতে পারেননি পাকিস্তানি পেসাররা। তাতে কী? সফরকারী দলের ব্যাটসম্যান যে স্বাগতিকদের একাধিক উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে একটা সময় তো ১৫০-১৭০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোহাম্মদ মিথুনের লড়াকু ব্যাটিংয়ের সুবাদে ২৩৩ রানে পৌঁছাতে পারে সফরকারীরা।

গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছিল ইনিংসের প্রথম ওভারেই। ওই ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরে শাহিন আফ্রিদির করা তৃতীয় বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় সিøপে আসাদ শফিকের হাতে ধরা পড়ে ফেরেন অভিষিক্ত সাইফ হাসান (০)। পরের ওভারেই মোহাম্মদ আব্বাসের উইকেট সোজা বলে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে তামিম ইকবাল বিপদে পড়েন। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। তবে রিভিউ নিয়ে সফল হয় পাকিস্তান।

বাংলাদেশের দুই ওপেনার যখন ফেরেন, তখন স্কোর বোর্ডে রান মাত্র ৩। এমন অবস্থায় সফরকারীদের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হক। তৃতীয় উইকেটে বেশ দেখে-শুনে খেলেন তারা। জুটিতে যোগ করেন ৫৯ রান। ঠিক তখনই শাহিন আফ্রিদির অফ স্টাম্পের বাইরে বলে অযথা ব্যাট চালিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন মুমিনুল। আউট হওয়ার আগে তিনি ৫৯ বলে ৫ চারে করেন ৩০ রান।

মুমিনুল ফিরলেও নাজমুল দুর্দান্ত খেলেছিলেন। তাতে বোঝাই যায়নি ক্যারিয়ারে মাত্র তৃতীয় টেস্টটি খেলতে নেমেছিলেন তিনি। পাকিস্তানি বোলারদের সামলেছেন দারুণভাবে। একেবারে ঝকঝকে ইনিংস। কিন্তু একটি মোহাম্মদ আব্বাসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দিয়ে এ বাঁহাতি ফেরেন ১০৪ বলে ৬ চারে ৪৪ রানে। এরপর বড় ধাক্কা হয়ে আসে মাহমুদউল্লাহর আউট। ২৫ রান করে শাহিন আফ্রিদির বলে আসাদ শফিকের ক্যাচ হয়ে ফিরেন তিনি। তবে এ দুই ধাক্কা খুব ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিলেন মোহাম্মদ মিথুন আর লিটন দাস। শুধু জবাবই নয়, রীতিমতো পাল্টা আক্রমণ। এর ফলে ৫৭ রানের জুটিও গড়েছিলেন তারা। ঠিক সে সময় হারিস সোহেলের উইকেট সোজা বলে ক্রস ব্যাট চালাতে যেয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন লিটন (৩৩)। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ধীর ধীরে দলের রান এগিয়ে নেন মিথুন। একপর্যায়ে এ ডানহাতি ১৩৭ বলে ৬ চারে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন। অন্যদিকে তাইজুলের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে গড়েন কার্যকরী ৫৩ রানের জুটি। তাতে তাইজুলের অবদান ছিল ২৪ রান। এরপর তাইজুল বড় শট খেলতে গিয়ে ফিরেন ইয়াসির শাহর ক্যাচ হয়ে।

হাফসেঞ্চুরির পর মিথুন চেয়েছিলেন বড় শট খেলে দ্রুত রান বাড়াতে। কিন্তু শেষ বিকালে পাকিস্তান নতুন বল নিতেই এ ডানহাতি নাসিম শাহর নিরীহ এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। কিন্তু রিভিউয়ে সফল হয় পাকিস্তান। তার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ১ ছয়ে ৬৩ রান। কিন্তু দিনশেষে সফরকারীদের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্রটা কিন্তু ঢাকতে পারেনি শুধু মিথুনের ব্যাটিংয়ে।

পাকিস্তানের সফল বোলার শাহিন আফ্রিদি। এ বাঁহাতি পেসার মাত্র ৫৩ রানে ৪ উইকেট। এদিকে মোহাম্মদ আব্বাস ও হারিস সোহেল নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮২.৫ ওভারে ২৩৩ (তামিম ৩, সাইফ ০, শান্ত ৪৪, মুমিনুল ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মিথুন ৬৩, লিটন ৩৩, তাইজুল ২৪, রুবেল ১, আবু জায়েদ ০, ইবাদত ০*; আফ্রিদি ২১.৫-৩-৫৩-৪, আব্বাস ১৭-৯-১৯-২, নাসিম ১৬-০-৬১-১, ইয়াসির ২২-২-৮৩-০, হারিস ৬-২-১১-২)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০