Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:28 am

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি : ৭২ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কাস্টমসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য আটক মামলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৩০ মামলার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৭০ টাকা। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে ২০ কোটি ১০ লাখ ১১ হাজার ৬৩৩ টাকা বেশি। আর শতাংশের হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। বাড়তি নজরদারির ফলে জালিয়াতির ঘটনাও কমছে বলে মনে করেন কাস্টম কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, আমদানিকারকরা শূন্য শুল্কের পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে বিলাসবহুল জাতীয় পণ্য আমদানি করাকে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পণ্য বলা হয়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সর্বমোট (সাধারণ ও জিপি সিট মামলা) ৭৩০টি মামলা করে। এতে মোট অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৭০ টাকা। শুধু জিপি সিট থেকে আদায় হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৯ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় চার কোটি ৬৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৪০ টাকা বেশি। গত বছরের জুলাই মাসে ৪০টি সাধারণ ও জিপি শিট মামলার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক কোটি ২৩ লাখ ৫৪৬ টাকা, আগস্টে ৪৪ মামলার বিপরীতে পাঁচ কোটি ৯২ লাখ ৪০৭ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২৭ মামলার বিপরীতে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ১৯২ টাকা, অক্টোবরে ৪১ মামলার বিপরীতে দুই কোটি ৯১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ টাকা, নভেম্বরে ৬০ মামলার বিপরীতে পাঁচ কোটি ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯২ টাকা, ডিসেম্বরে ৭৩ মামলায় চার কোটি ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৯ টাকা, জানুয়ারিতে ১০১ মামলায় ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩১ টাকা।
আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৯১ মামলায় আট কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৫৪ টাকা, মার্চে ৮৬ মামলায় ৯ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৬১ টাকা, এপ্রিলে ৫৬ মামলায় আট কোটি ৫২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৫ টাকা, মে মাসে ৫৬ মামলায় চার কোটি ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ১৯৪ টাকা এবং জুনে ৫৫ মামলায় পাঁচ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৭ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ২৪টি মামলা হলেও রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৬ টাকা, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কম।
কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি হচ্ছেÑএমন তথ্যের ভিত্তিতে এআইআর শাখা সন্দেহজনক চালানগুলো নজরদারি করে। কর্মকর্তারা কায়িক পরীক্ষা শেষে ঘোষণাবহির্ভূত কোনো পণ্য আমদানি হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হন। এ সময় মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা কোনো পণ্য তাদের নজরে এলে মামলা করেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। এছাড়া সন্দেহের তালিকায় থাকা চালানের খালাস কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করতে অ্যাসাইকোডা ওয়ার্ল্ডে (কাস্টমসের সার্ভার) চালানটি লক করা হয়। তখন পণ্যের কায়িক পরীক্ষায় বিস্তারিত যাচাই-বাছাই ছাড়া পণ্য খালাস করতে পারে না আমদানিকারকের প্রতিনিধিত্বকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। নজরদারির বাড়ানোর কারণে তুলনামূলক রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ক্লাস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে জালিয়াতি, বিভিন্ন চালানে বড় ধরনের রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও নজরদারি বৃদ্ধির কারণে গত অর্থবছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় বেড়েছে। নজরদারি বাড়ানোর ফলে জালিয়াতির ঘটনাও কমছে। অপরদিকে সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি সাত লাখ টাকা। আর বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার কি পরিমাণ আদায় হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি হয় ১৮ শতাংশ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে এবার পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে চলতি বছরের জুনের শেষ সপ্তাহে ঈদের বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১৫০ কোটি করে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। সাধারণত জুনের শেষ সপ্তাহে রাজস্ব আদায় বেশি হয়ে থাকে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় হওয়ার পর সঠিক তথ্যটি জানা যাবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কাস্টমস দেশের সর্ববৃহৎ কাস্টম হাউজ। এ কাস্টমস দিয়ে দেশের আমদানি বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং রফতানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। দেশের সাত হাজার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রায় সাড়ে চার হাজার এইচএস কোডভুক্ত (পণ্যের পরিচিতি তালিকা) পণ্য থেকে এ রাজস্ব আহরণ করেছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণকারী এ সংস্থা।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ১২১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

আমদানি বাড়ায় কমছে চালের দাম

শেয়ার বিজ ডেস্ক

চালের অব্যাহত দর বৃদ্ধি ও ঘাটতির শঙ্কার মধ্যে শুল্ক কমানোয় বিপুল পরিমাণে শুরু হয়েছে আমদানি। যার প্রভাবে এরই মধ্যে বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। চলতি জুলাই মাসের প্রথম চার দিনেই ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের আমদানির প্রায় অর্ধেক। বৃহস্পতিবার ঢাকার পাইকারি বাজারে দেশি চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা কমেছে। খবর বিডিনিউজ।
আমদানি করা চালে কমেছে দুই থেকে আড়াই টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনও চালের দাম কমার প্রমাণ পাওয়া যায়নি; যদিও টিসিবির সর্বশেষ বাজার দরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় সরু চালে কেজিপ্রতি এক থেকে দুই এবং মোটা চালে দুই থেকে তিন টাকা কমার কথা বলা হয়েছে।
ঢাকায় চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেছেন, সরকার শুল্ক কমানোয় আমদানি বাড়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে। সারা দেশে চাল সরবরাহের জন্য পরিচিত দিনাজপুরেও চালের দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, চালের দাম আরও কমবে। যেসব মিল মালিক ও আড়তদার বাজারে চাল না ছেড়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছিলেন, তাদের ‘কপালে হাত’ পড়বে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চার দিনেই (১ জুলাই থেকে ৪ জুলাই) প্রায় ৬০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জুলাই বুধবারই আমদানি হয়েছে ৫৯ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। এখন পর্যন্ত যে চাল আমদানি হয়েছে, তার পুরোটাই
বেসরকারি পর্যায়ে। সরকারি পর্যায়ে আমদানির কোনো চাল এখনও দেশে পৌঁছায়নি।
চালের মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে আমদানি বাড়াতে ঈদের আগে বিদ্যমান শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে এক লাফে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় সরকার। ঈদের ছুটির পর মূলত ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাবুবাজারের ভূঁইয়া রাইসের মালিক মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে প্রচুর চাল দেশে আসছে। শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকরা চাল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। যার ফলে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। আর সরু চালের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
বৃহস্পতিবার বাদামতলী-বাবুবাজার চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এ চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।
আর সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। ঈদের আগে এ চাল ৫১ থেকে ৫৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারির প্রভাব এখনও খুচরা বাজারে পড়েনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের
(এফপিএমইউ) খাদ্যশস্য পরিস্থিতিবিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪ জুলাই পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলোতে এক লাখ ৫৩ হাজার টন চাল মজুত আছে। গত বছরের ৪ জুলাই এ মজুতের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৯০
হাজার টনের বেশি।