মিনি করমেলা

মিনিটেই করসেবা, নো মাস্ক নো সার্ভিস

## স্বাস্থ্যবিধি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে বগুড়ায় রোভার স্কাউট

## কর সচেতনতা বাড়াতে রংপুরে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি চলছে প্রচারণা

## মেলার সেবা মনিটরিং করছে এনবিআর, তদারকিতে কমিশনাররা

রহমত রহমান: এ বছর চলছে মেলার আদলে ‘মিনি করমেলা’। কর অঞ্চল, কর অফিস ও সার্কেলে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মেলা চলবে। মিনি করমেলা হলেও মেলার মতোই সব সেবা দেওয়া হচ্ছে। নেই ভিড়, নেই হয়রানি। মিনিটেই করদাতারা রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে কর্মকর্তারা সেবা দিচ্ছেন। মেলায় রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি করদাতাদের রিটার্ন পূরণে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

আয়কর তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে রিটার্ন পূরনের সহযোগিতা নিয়ে সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি সার্কেল-২৫৮ (সাভার), কর অঞ্চল-১২, ঢাকা রিটার্ন দাখিল করছেন। ছবি-কর অঞ্চল-১২

রিটার্ন ফরম, আয়কর নির্দেশিকা, চালান ফরম, সচেতনতামূলক লিফলেট ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু কর অঞ্চলে বয়স্ক, মহিলা, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য করা হয়েছে আলাদা বুথ। কর সচেতনতা বাড়াতে কোনো কোনো কর অঞ্চল ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে প্রচারণা চালাচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট লাগানো হয়েছে। এনবিআর থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

বগুড়া কর অঞ্চলে করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের ভিড়। ছবি-সংগৃহীত

অন্যদিকে, করোনার কারণে মেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মেলার বুথ ও অফিসে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া সেবা দেওয়া হচ্ছে না। আবার কোথাও কোথাও করদাতা-সেবাগ্রহীতাদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।

সংক্রমণ রোধে বুথগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেলায় আগতদের মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া মেলায় প্রবেশ করা ও সেবা দেওয়া হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ রোধে রিটার্ন দাখিল ও সেবা নেওয়ার পরপরই স্থান ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গাজীপুর মিনি করমেলার উদ্বোধন করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান। ছবি-সংগৃহীত

রংপুর কর অঞ্চলের কমিশনার আবু হান্নান দেলওয়ার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, কর মেলার আদলে মিনি কর মেলায় আমরা ‘ওয়ান স্টপ’ করসেবা দিচ্ছি। এ কর অঞ্চলের অধীনে সাত জেলায় আলাদা মেলা হচ্ছে। আলাদা বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

২১ নভেম্বর ২০২০ শনিবার দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সনে নিউজ। wwwesharebiz.net

তিনি বলেন, কর অঞ্চলের স্থায়ী কর তথ্য সেবা কেন্দ্রে বয়স্ক, মহিলা, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সব ফরম ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে কর-সংক্রান্ত পরামর্শ। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার রিটার্ন দাখিল ও প্রায় এক লাখ করদাতাকে সেবা দেওয়া হয়েছে। কর সচেতনতা তৈরিতে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গাড়িটি রংপুর জেলা ও উপজেলা শহরে ঘুরছে।

মিনি করমেলা পরিদর্শন, সেবা ও রিটার্ন গ্রহণ বিষয়ে করদাতাদের সাথে কথা বলছেন রংপুর কর কমিশনার

তিনি আরও বলেন, ‘করদাতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমরা তৎপর। মেলার প্রবেশ মুখে সিকিউরিটি গার্ড মাস্ক পরতে বাধ্য করছেন। যাদের মাস্ক নেই তাদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।’

কর অঞ্চল-১২-এর কমিশনার মো. আবদুল মজিদ বলেন, কর অঞ্চল, সার্কেল নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইএন গ্রহণ, রিটার্ন পূরণে সহায়তাসহ মেলার সব সেবা এখানে দেওয়া হচ্ছে। এক-দুই মিনিটের মধ্যেই করদাতারা সেবা নিতে পারছেন। করদাতা ও কর্মকর্তা সবার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া সেবা দেওয়া হচ্ছে না। প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেবা প্রদান সহজ করতে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। করদাতারা সহজেই কিউআর কোড স্ক্যান করে সব ধরনের ফরম, নির্দেশিকা, করসংক্রান্ত তথ্য পাবেন।

মেলা পরিদর্শন ও করসেবা বিষয়ে কথা বলছেন কর কমিশনার-১২, ঢাকা

কর অঞ্চল-১০-এর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম বলেন, প্রতিনিয়ত করদাতাদের ভিড় বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আমরা কঠোর। মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে রিটার্ন দাখিল, সেবা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে করোনা প্রতিরোধী বুথ করা হয়েছে।

কর অঞ্চল-১০, ঢাকা মিনি করমেলায় রিটার্ন দাখিল ও সেবা গ্রহণ করছেন করদাতারা। ছবি-সংগৃহীত

কর অঞ্চল-৫-এর কমিশনার সোহায়েব আহমেদ বলেন, সার্কেল অফিসে আলাদা বুথ করা হয়েছে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া সেবা দেওয়া হচ্ছে না। করদাতারা এক ছাদের নিচে সব ধরনের সেবা পাচ্ছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে করদাতারা সেবা নিচ্ছেন। কর্মকর্তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন।

মিনি করমেলা পরিদর্শন ও করদাতাদের সাথে কথা বলছেন কর অঞ্চল-৫, ঢাকা’র কমিশনার

খুলনা কর অঞ্চলের কর কমিশনার মো. ফারুক আহমদ বলেন, এ কর অঞ্চলে নিবন্ধিত করদাতা প্রায় পাঁচ লাখ। গতকাল পর্যন্ত ৭৯ হাজার ৯০ জন রিটার্ন দাখিল ও এক লাখ ৬৮ হাজার করসেবা নিয়েছেন। বাকি করদাতারা টাইম ফেয়ার নেবেন। মেলায় আড়াই লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করবেন বলে আমরা ধারণা করছি।

কর অঞ্চল খুলনার কমিশনার মেলা পরিদর্শন ও করদাতাদের সাথে কথা বলছেন। ছবি-সংগৃহীত

তিনি বলেন, খুলনা বিভাগীয় শহরে পাঁচটি, খুলনার ১০টি জেলা শহর ও ৮টি উপজেলায় সার্কেল রয়েছে। ছোট সার্কেলে চারটি ও বড় সার্কেলে পাঁচটি বুথ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে প্রতিটি বুথের সারিতে পাঁচজনের বেশি করদাতা দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। এছাড়া করদাতাদের মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে করদাতারা রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।

গাজীপুর কর অঞ্চলের কর কমিশনার মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সার্কেলে রিটার্ন নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কর অঞ্চলে একটি স্থায়ী করদাতা সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। চেয়ারম্যান উদ্বোধন করেছেন। সেবা কেন্দ্রে করদাতারা রিটার্ন দাখিল ও সব সেবা নিতে পারছেন। এ সেবা কেন্দ্র থেকে সারা বছর সেবা দেওয়া হবে। নো মাস্ক, নো সার্ভিস কঠোরভাবে মানা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এ কর অঞ্চলের অধীন বড় করদাতা প্রতিষ্ঠান ও করদাতাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর ফলও আমরা পেয়েছি। এবার করোনা সংক্রমণ রোধে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একসঙ্গে তাদের সব রিটার্ন আমরা সংগ্রহ করছি।’

কর অঞ্চল-২-এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. সারওয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, মেলার আদলে সার্কেল অফিস সাজানো হয়েছে। কর তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে সব সেবা দেওয়া হচ্ছে। করা হয়েছে আলাদা বুথ। করদাতাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধী বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সব ধরনের ফরম, নিদের্শিকা ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। করদাতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে রিটার্ন দাখিল করছেন।

কর অঞ্চল বগুড়ার কর কমিশনার স্বপন কুমার রায় বলেন, এ কর অঞ্চলের অধীন চারটি জেলা। কর অঞ্চল ও প্রতিটি জেলা অফিসে মেলার আদলে মিনি করমেলার আয়োজন করা হয়েছে। করা হয়েছে আলাদা বুথ। সেবা কেন্দ্র থেকে সব ধরনের করসেবা দেওয়া হচ্ছে। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। সাজানো হয়েছে কর অফিস। করদাতারা ভালোই সাড়া দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি আরও কঠোরভাবে মানা এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় মেলায় রোভার স্কাউটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২১ নভেম্বর থেকে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ করে করদাতারা কোন বুথে কী সেবা পাবেন সে বিষয়ে তারা সহযোগিতা করবেন। এছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধে করদাতাদের সচেতন করবেন তারা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০