‘মিয়ানমারের ছোড়া গুলি এসে পড়ল টেকনাফে’ শীর্ষক প্রতবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের পত্রপত্রিকায়। ওই এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে গুলি এসে পড়েছে। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নাফ নদীর আশপাশে বসবাস করা লোকজনের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তে বসবাস করা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের কিছুটা দূরে নাফ নদীর অভ্যন্তরে লালদিয়ার দ্বীপ ঘিরে এই সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে। লালদিয়া দ্বীপ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পড়েছে।
লালদিয়ায় সংঘর্ষে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে গুলি আসছে। এর আগে কয়েকবার মর্টারের গোলা পড়েছে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এটিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা একান্তই মিয়ানমারের। কিন্তু বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অবস্থানের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারের প্রকৃতি, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলায়। কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতাও ছিল কিন্তু সেটির সমাধান করা যায়নি। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে অনন্তকাল আশ্রয় দেয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর আগের মিয়ানমার থেকে দফায় দফায় বাংলাদেশ সীমান্তে গোলা এসে পড়ার ঘটনায় ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানোর পরও সুরাহা হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের স্বার্থে রাখাইন শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন বলেও সে বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করা হয়েছিল। রাখাইনে আরাকান আর্মি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতের ধারাবাহিকতায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের জমায়েত হওয়ার খবরে বাংলাদেশিরা বিচলিত হচ্ছে। এখানে কোনো উসকানি আছে কিনা, কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা- সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। আর একজন মিয়ানমারবাসীও যেন ফাঁকফোকর গলে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এ ব্যাপারে আমাদের সীমান্তরক্ষীদের (বিজিবি) সতর্ক থাকতে হবে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং চলমান বৈশ্বিক সংকটে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। এ দেশ রোহিঙ্গামুক্ত হবে কি না, সে নিয়ে মানুষ এখন দ্বিধায় ভুগছে। এখন নতুন সংকট। যেহেতু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান একপ্রকার অনিশ্চিত; তাই সরকারের উচিত হবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ত্বরিত হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করা।