মিরাকলের শেয়ার কিনছে মেহমুদ ইকুইটিজ

আতাউর রহমান:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চার পরিচালকের শেয়ার স্থানান্তরে তিন মাস সময় পেয়েছে মেহমুদ ইকুইটিজ লিমিটেড। কয়েকটি সমস্যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শেয়ার কেনা সম্পন্ন করতে পারেনি মেহমুদ ইকুইটিজ। পরে সময় বাড়ানোর আবেদন জানালে তিন মাস সময় বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চিঠি ইস্যুর তিন মাসের মধ্যে তিন ধাপে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে কোম্পানি দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও  জানানো হয়েছে।

এর আগে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানা পরিবর্তনে কোম্পানিটির ‘গ্রুপ বি’ শেয়ারধারী চার পরিচালকের শেয়ার কেনার অনুমোদন দেয়া হয় মেহমুদ ইকুইটিজ লিমিটেডকে। চার শেয়ারধারী পরিচালকের ১০ শতাংশ শেয়ার কিনতে প্রতিষ্ঠানটিকে এ অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এর মাধ্যমে মিরাকলের একাধিক পরিচালক পদ নেয়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও পাবে মেহমুদ ইকুইটিজ।

শেয়ার স্থানান্তরের অনুমোদন দেয়া ও সময় বাড়ানোর আবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করে বিএসইসির দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, এর আগে ক্রেতা মেহমুদ ইকুইটিজ এবং বিক্রেতা মিরাকলের চার শেয়ারহোল্ডার উভয় পক্ষকেই শেয়ার স্থানান্তর সম্পন্ন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মেহমুদ ইকুইটিজের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি ধাপে শেয়ার স্থানান্তর সম্পন্ন করতে হবে।

এর আগে মেহমুদ ইকুইটিজের আবেদনে বলা হয়েছে, মিরাকলের চার শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে মেহমুদ ইকুইটিজের শেয়ার কেনার অনুমোদন দেয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু শেয়ার স্থানান্তর সম্পন্ন না হওয়ায় কোম্পানি দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, চিঠিতে উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।

যে কারণে সম্ভব হয়নি সেগুলো হলোÑএই ধরনের শেয়ার স্থানান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার না থাকায় ডিএসই শেয়ার স্থানান্তর করতে অস্বীকার করেছে। মিরাকলের চার শেয়ারহোল্ডার একবারে সব শেয়ার সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসে আগে থেকে রাখতে পারেনি। কারণ শেয়ারগুলো একটি ব্যাংক বা সমবায় ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে; যা শেয়ার কেনার সময় মেহমুদ ইকুইটিজ কর্তৃপক্ষের জানা ছিল না।

তবে শেয়ার স্থানান্তর তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা যেতে পারেÑউল্লেখ করে কোম্পানি জানায়, প্রথম ধাপে বিএসইসি সময় বাড়ানোর পর মিরাকলের চার

 শেয়ারহোল্ডারের যে ২০ লাখ ২২ হাজার ৯০০ শেয়ার স্থানান্তরের জন্য ব্রোকারেজের কাছে আছে সেগুলো স্থানান্তর করা। দ্বিতীয় ধাপে মিরাকলের চার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে যে শেয়ারহোল্ডারের ১০ লাখ শেয়ার ব্যাংকে বন্ধক কাছে, সেই শেয়ার স্থানান্তর সম্পন্ন করা হবে। ইতোমধ্যে সেই শেয়ারের বিষয়ে ব্যাংক থেকে একটি এনওসি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়। সবশেষে তৃতীয় ধাপে চার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে এক শেয়ারহোল্ডারের যে ৫ লাখ শেয়ার সমবায় ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে, সেই শেয়ার স্থানান্তর সম্পন্ন করা। তাই উল্লিখিত স্থানান্তর সম্পূর্ণ করার জন্য তিন মাস সময় দেয়ার জন্য আবেদন জানায় মেহমুদ ইকুইটিজ।

এর মধ্যে বিএসইসির অনুমোদনের পর গত ১০ মে পুনরায় ২০ লাখ ২২ হাজার ৯০০ শেয়ার স্থানান্তরের ঘোষণা দেয় মিরাকলের চার শেয়ারহোল্ডার। পরে ১৭ মে শেয়ার স্থানান্তর সম্পন্ন হয়েছে বলে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে জানায় তারা।

উল্লেখ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সঙ্গে চারজন শেয়ারধারী পরিচালকের একটি যৌথ মালিকানার কোম্পানি হচ্ছে মিরাকল। কোম্পানিটির প্রকৃত শেয়ারহোল্ডার চুক্তি অনুযায়ী মিরাকলে দুই ধরনের শেয়ারধারী রয়েছেনÑএর মধ্যে বিসিআইসির ২০ শতাংশ শেয়ার ‘গ্রুপ-এ’র অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানিটিতে বিসিআইসির মনোনীত তিনজন পরিচালক রয়েছেন। এছাড়া কোম্পানিটির অন্য চার পরিচালকের শেয়ার ‘গ্রুপ-বি’র অন্তর্ভুক্ত, যাদের ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই মিরাকলের গ্রুপ-এ ও গ্রুপ-বি শেয়ারধারী পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে, যার প্রভাব কোম্পানিটির পরিচালন ও ব্যবস্থাপনায় পড়ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৯-২০ হিসাব বছরে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ উৎপাদনকারী কোম্পানিটি এ সময় ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার নিট লোকসানে পড়ে। গত তিন বছর ধরে কোম্পানিটি চলতি মূলধন সংকটেও রয়েছে। গ্রুপ-বি শেয়ারধারী পরিচালক রফিকুল মুর্শেদ মিরাকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন।

পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রুপ-বি’র চার পরিচালক রফিকুল মোর্শেদ, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী, আসাদুর রহমান মির্জা ও পাভার্টন সিকিউরিটিজ লিমিটেড তাদের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে করে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ রাখার বাধ্যবাধকতার কারণে সংশ্লিষ্ট শেয়ার মেহমুদ ইকুইটিজের কাছে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়। মেহমুদ ইকুইটিজ ও সংশ্লিষ্ট চার পরিচালকের ‘সমঝোতা চুক্তি’ ও এসইসির কাছে আবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ২৩ মে বিএসইসি শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮-এর পরিচালকদের এই শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দেয়া হয়।

শেয়ার হস্তান্তরে এসইসির দেয়া শর্তানুযায়ী, চার পরিচালকের শেয়ার যেদিন হস্তান্তর হবে, সেদিন থেকে ওই শেয়ার ৫ বছর লকইন (শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা) থাকবে এবং ওই শেয়ারের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিরাকলের পরিচালনা পর্ষদের প্রতিনিধি হবেন। শেয়ার হস্তান্তরের আগেই কোম্পানিকে ২০১৯-২০ হিসাব বছরের অপরিশোধিত লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তী তিন বছর মিরাকল কোনো স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না।

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা রয়েছে শ্রীপুর ও গাজীপুরে। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের পিপি ওভেন ব্যাগ, লেমিনেশনসহ লাইনার ব্যাগ, সিমেন্ট, সার, লবণ, চিনি ও কেমিক্যালের জন্য জাম্বু ব্যাগ উৎপাদন করে। মিরাকলের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০