ক্রীড়া ডেস্ক: একটা সময় বাংলাদেশ যুবদলের অধিনায়ক ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তখনই জানা ছিল অফ ব্রেকের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য তার যথেষ্টই। কিন্তু জাতীয় দলে এতদিন ব্যাটিংয়ে ফুল ফোটাতে পারছিলেন না তিনি। তবে নিচের দিকে নেমে প্রয়োজনীয় রান সব সময়ই করেছেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এ ডানহাতি জ্বলে উঠলেন ব্যাট হাতে। দলের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে এক প্রান্ত আগলে রেখে অসাধারণ খেললেন। একপর্যায়ে পেয়ে গেলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ। শেষ পর্যন্ত তার নৈপুণ্যে ভর করে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৪৩০ রানের বড় পুঁজি। এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের তোপে শুরুতেই জোড়া সাফল্য পায় টিম টাইগার্স। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় উইকেটের জুটির প্রতিরোধ এদিন ভাঙতে পারেনি স্বাগতিরা। যে কারণে ২ উইকেটে ৭৫ রান তুলেছে তারা। তারপরও মুমিনুল হকের দল এগিয়ে রয়েছে ৩৫৫ রানে।
মিরাজের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানে তিন অঙ্কের একটা ইনিংসেরই আক্ষেপ ছিল মিরাজের। শেষ পর্যন্ত ২৩তম টেস্টে এসে সেই স্বাদ পেলেন তিনি। এজন্য এ তারকা খেলেন ১৬৮ বল। তার ১০৩ রানের ইনিংসে চারের মার ১৩টি। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। ২০০৪ সালে এই পজিশনে শতরান করেছিলেন খালেদ মাসুদ, ২০১০ সালে মাহমুদউল্লাহ ও ২০১৩ সালে সোহাগ গাজী।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার মিরাজ ব্যাট করেন ২২৪ মিনিট। যদিও ২৪ রানে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে প্রায় আউট হতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সে যাত্রায় বেঁচে যান খুলনার এ ক্রিকেট। শেষ পর্যন্ত সেই ওয়ারিক্যানের বলে সুইপ করেই নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটি আদায় করে নেন বাংলাদেশের এই তরুণ অলরাউন্ডার।
সেই ২০১৮ সালের নভেম্বরের পর বৃহস্পতিবারই টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত এটাকেই রূপ দেন সেঞ্চুরিতে। সর্বশেষ ফিফটিটি তার এসেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। তার টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটিটি ছিল অবশ্য হায়দরাবাদে, ভারতের বিপক্ষে, ২০১৭ সালে। গত ১২ ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৮।
মিরাজের সেঞ্চুরির দিনে দারুণ অর্ধশতক তুলে নেন সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রামের উইকেটে ব্যাটিং করাটা তার কাছে কঠিন কিছু মনে হচ্ছিল না দ্বিতীয় দিন সকালেও। প্রথম দিন শেষে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকা সাকিবের ব্যাটিং এদিনও এতটাই নিয়ন্ত্রিত ছিল যে মনেই হয়নি তিনি টেস্ট খেলতে নেমেছেন প্রায় দেড় বছর পর।
দারুণ ব্যাটিং করা সাকিব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইনিংস বড় করার। এজন্য লাঞ্চের আগের কয়েকটি ওভার দেখে শুনে কাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি এ বাঁহাতি। প্রতিপক্ষকে নিজের উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন সাকিব। কর্নওয়ালের বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। কাটশটে যেখানে ওপর থেকে নিচে আসার কথা ব্যাট, সাকিব নিচ থেকে ওপরের দিকে ব্যাট চালিয়ে যেন ক্যাচিং অনুশীলন করাতে চাইলেন। সহজ ক্যাচ পয়েন্টে। শটটি খেলে সাকিব নিজেও প্রকাশ করেন খানিকটা হতাশা। তবে থামতে হয় তাকে ১৫০ বলে ৬৮ রান করে। তার বিদায়ে ভাঙে মিরাজের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি।
সাকিব ফেরার পর অনেকটা এক প্রান্ত আগলে খেলে যান মিরাজ। ৯৯ বলে স্পর্শ করেন তিনি ফিফটি। এজন্য অবশ্য প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কিছুটা সহায়তাও অবশ্য পান এ ডানহাতি। ২৪, ৭১ আর ৮৫ রানে, তাকে ফেরাতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খুব সহজ অবশ্য ছিল না সুযোগগুলো।
লোয়ার অর্ডারের সতীর্থরা দারুণ সঙ্গ দেন মিরাজকে। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে তিনি গড়ে তোলেন ৪৪ রানের জুটি। এদিকে নবম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে এ তারকা গড়েন ৫৭ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির ঠিকানায় পৌঁছান মিরাজ। এরপরই কর্নওয়ালকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন এ তারকা। তার আগে অবশ্য বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়ে দেন তিনি।
এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালেই জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে অযথা জোর করে বানিয়ে শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন লিটন। বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ে সাকিবের সঙ্গে ৫৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি ভাঙে। সেই ধাক্কা ভুলিয়ে দিতে একদমই সময় নেননি মিরাজ। উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই খেলতে থাকেন দুর্দান্ত সব শট। শেষ পর্যন্ত তার সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে বড় লক্ষ্যমাত্রায় দিতে পারে টিম টাইগার্স। উইন্ডিজের ওয়ারিক্যান ১৩৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এদিকে ১৩৩ রানে কর্নওয়াল নেন ২টি উইকেট।
বল হাতে শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে জন ক্যাম্পবেলকে (৩) তুলে নেন মোস্তাফিজ। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন এই ক্যারিবীয় ওপেনার। রিভিউ নিয়েছিলেন ক্যাম্পবেল। কিন্তু তাতে সফল হননি। এর এক বল পরই শেন মোজলিকেও (২) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ফিজ। বাঁচতে তিনিও নেন রিভিউ। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টো একটি রিভিউ নষ্ট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপর সফরকারীদের ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও ক্রমা বোনার ৫১ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেন। তবে প্রথম ইনিংসে ঠিকই ৩৫৫ রানে এগিয়ে বেশ স্বস্তি রয়েছে টিম টাইগার্স।
১৮ রানে মোস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন ২ উইকেট। গতকাল শেষ বিকালে বাংলাদেশের স্পিনাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। যে কারণে সাকিব-তাইজুলরা রয়ে গেছেন উইকেট শূন্যই।