নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সেই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। কিন্তু আদালতের বিচারে মামলা থেকে অব্যাহতি পান টিপু। কিন্তু মিল্কীর সহযোগীরা ভাবতেন, এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন টিপু। আর সেজন্য মিল্কী হত্যার ৯ বছর পর প্রতিশোধ নিহেত হত্যা করা হয় টিপুকে। ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে করা হয় হত্যার পরিকল্পনা। আর টিপুকে হত্যা করার সময় এলোপাথারি গুলিতে ভুলবসত নিহত হয় কলেজছাত্রী প্রীতি।
শনিবার (২ এপ্রিল) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
বহুল আলোচিত রাজধানীর শাহজাহানপুরে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এই চার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডও আছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার (৩৮), নাছির উদ্দিন (৩৮) ও মোরশেদুল আলম (৫১)। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, নগদ টাকা ও মোবাইলসহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিম ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল। এছাড়া এলাকার আধিপত্য বিস্তারসহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়েও টিপুর সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের দ্বন্দ্ব ছিল। আর এসব দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই টিপুকে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেপ্তাররা মিল্কীর সহযোগী ছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে টিপু জড়িত ছিলেন বলে গ্রেপ্তাররা সন্দেহ করতেন। তখন মিল্কী হত্যায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল সেখানে এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন টিপু। কিন্তু বিচারিক কার্যক্রমে তার (টিপু) নাম বাদ পড়ে। যা গ্রেপ্তারদের মনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতরা টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে হত্যা করে। বর্তমানে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। তাদের ধারণা টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। মামলার বাদী রিজভীর বাবা আবুল কালামের সাথে গ্রেপ্তারকৃতরা ৫০ লাখ টাকায় দফারফার চেষ্টা করে। কিন্তু টিপুর কারণে তা হয়নি।
টিপু সবসময় কালামকে নিয়ে চলাচল করতো। তারা একপর্যায়ে কালামকে হত্যার পরিকল্পনা করে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কালামের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর তারা টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা ছিল, কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না।
র্যাব জানায়, রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেপ্তারকৃত মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে বলে। মোরশেদুল আলম রাজী থাকা সত্বেও টিপুর চাপে সে সাক্ষ্য দেয়। মোরশেদুল পরে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে টিপুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়।
টিপুকে হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট করেন পরিকল্পনাকারীরা। আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন মুসার ওপর দায়িত্ব আসে টিপুকে হত্যার। ঘটনার ১২ দিন আগে মুসা দুবাই চলে যান। সেখানে বসে তিনি কিলার নিয়োগ করা থেকে শুরু করে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
মিল্কী হত্যার প্রতিশোধ নিতেই শাহজাহানপুরে টিপুকে হত্যা
