মিল মালিকদের ধান মজুতের ক্ষমতা খর্ব করল সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চালকল (মিল) মালিকদের ধান মজুতের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। দেশে বর্তমানে ধান-চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকায় সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে এই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। মিল মালিকরা বলছেন, সরকার মজুদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ায় কৃষকদের ধান বিক্রিতে সমস্যা তৈরি হবে। তবে সরকার বলছে, কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য প্রয়োজনের তুলনায় সরকার কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ধান কিনবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে সম্প্রতি চালের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার সম্প্রতি সরকার মিল মালিকদের মজুত ক্ষমতা খর্ব করে। কারণ প্রতি বছর বোরো ও আমন মৌসুমে মিল মালিক তাদের বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বিপুল পরিমাণ ধান মজুত রাখে। ব্যাংক থেকে তারা বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ধানের মজুত গড়ে তোলেন। আর তখন বাজারে চালের দাম মূলত তাদের ওপর নির্ভর করে। মিলারদের মজুত ক্ষমতা কম থাকলে চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তখন সাধারণ মানুষকে অস্বাভাবিক মূল্যে চাল কিনতে হবে না। পাশাপাশি কৃষকও যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য সরকার বিপুল পরিমাণ মজুত গড়ে তুলবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গছে। আর চালের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে মূলত মিল মালিকরাই দায়ী। প্রশাসনের তৃণমূল পর্যায়েও নজরদারিতেও এই বিষয়টি ওঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে মিল মালিকদের মজুতের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ বাজারে ৫০ টাকার নিচে চাল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। 

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সংশোধিত আদেশ জারি করা হয়েছে। কী পরিমাণ খাদ্যশস্য বা খাদ্যসামগ্রী (চাল, ধান, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল) কতদিন মজুত করা যাবে তা নির্ধারণ করে ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টের অধীনে ২০১১ সালের ৪ মে একটি আদেশ জারি করা হয়।

সরকারি আদেশ অনুযায়ী, চালকল মালিক পর্যায়ে অটোমেটিক, মেজর ও হাসকিং চালকলের ক্ষেত্রে পাক্ষিক (১৫ দিনে) ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচগুণ ধান ৩০ দিন পর্যন্ত মজুত করা যেত। এখন সংশোধিত আদেশ অনুযায়ী, অটোমেটিক, মেজর ও হাসকিং চালকলের ক্ষেত্রে দৈনিক আট ঘণ্টা হিসাবে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার তিনগুণ ধান ৩০ দিন পর্যন্ত মজুত করা যাবে।

মিল মালিকরা জানান, বর্তমানে দেশে ধান-চালের মজুত পরিমাণ কম থাকায় বাজারে চালের দাম বাড়ছে। কৃষকদের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ ধান মিল মালিকরা না কিনলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন সরকার তাদের ধান কেনার জন্য অনুরোধ করবে। তবে মিল মালিকদের হিসাবমতে, আমন মৌসুমে ১৫০ দিন ও বোরো মৌসুমে ২১৫ দিন ধান সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিনে উৎপাদনের তিনগুণ অর্থাৎ ৪৫ দিনের ধান সংগ্রহ করতে হবে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ করা মিলারদের জন্য যেমন সমস্যা তৈরি হবে, পাশাপাশি কৃষকরাও ধান বিক্রি করতে না পারলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, সরকার মিল মালিকদের ধান মজুদের যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অন্তর্বর্তীকালীন হলে সমস্যা হবে না। তবে তা দীর্ঘমেয়াদি হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকারের সহযোগিতা না পেয়ে দেশের হাসকিং মিলগুলোর অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে চালের দাম ওঠানামা মূলত অটোমিলারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটোমেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী শেয়ার বিজকে বলেন, সরকার যে নীতিমালা জারি করেছে তা বাস্তবসম্মত হলে কার্যকর থাকবে। আর সেটি না হলে তা কার্যকর থাকবে না। সরকারের নীতিমালার কারণে দেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তখন কৃষকদের ধান কেনার লোক খোঁজে পাওয়া যাবে না।   

এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিলারদের অতি বেশি মুনাফা দায়ী। কৃষকদের ধান বিক্রিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য সরকার চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ করবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দেশে হাসকিং ও অটো মিল ছিল ১৮ হাজারের ওপরে। এর মধ্যে ছয় হাজার মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আর ৬০০টির মতো অটোরাইস মিল দেশে থাকলেও এখন চালু রয়েছে ৩৫০টির মতো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০