মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন হলেও এগিয়েছে সূচক

শেখ আবু তালেব: লেনদেনের মিশ্র প্রবণতার মধ্য দিয়ে সপ্তাহ পার করল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ কমে এলেও এগিয়েছে সব সূচক। এটিকে টানা উত্থানের পর নিয়মতান্ত্রিকভাবে শেয়ারদর সংশোধন হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ে ৩৬২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ১৮১টির, কমে ১৫০টির, অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির ও লেনদেন হয়নি দুটির।

আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে শেয়ারদর পতনের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারদর হারানোর তালিকায় বেশি ছিল ‘জেড’ ক্যাটেগরি ও তুলনামূলকভাবে বেশি উত্থানে থাকা কোম্পানির নাম। অপরদিকে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর পতন হতে দেখা যায়নি খুব একটা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে যারা নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের প্রায় সবাই মুনাফায় রয়েছেন। এখন অনেকেই মুনাফা তুলে অন্য খাতে আবার বিনিয়োগ করছেন। আবার অনেক বিনিয়োগকারীর শেয়ার ক্রয় দর পার করেছে, তারাও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ারগুলো বিক্রি করছেন। এতে কিছুটা পতন হলেও সামগ্রিকভাবে স্বস্তিকরভাবে সপ্তাহ পার করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে ৭৯ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা আট দশমিক ৬৫ শতাংশ। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ বৃদ্ধি পায় ৪৩ দশমিক শূন্য তিন পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৬১ শতাংশ ও ডিএস শরিয়াহ্ সূচক বৃদ্ধি পায় ৩০ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৭৫ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমলেও বেড়েছে বাজার মূলধন। গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় ৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা এখনও ওষুধ ও জ্বালানি খাতের শেয়ারেই আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরেই। আলোচনায় থাকা পাট খাতের কোম্পানি নিয়েও বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হচ্ছেন। করোনাকালেও খাদ্য খাতের কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা দেখাতে পারছেন। এ খাতের বিনিয়োগকারীরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছেন গত সপ্তাহে।

লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত সপ্তাহে পাট খাতের বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ মুনাফা দেখতে পেরেছে। এর পরই খাদ্য খাতে ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ, টেলিকম খাতে ৯ দশমিক দুই শতাংশ, ট্যানারি খাতে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ, সিমেন্ট খাতে চার দশমিক সাত শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে চার দশমিক পাঁচ শতাংশ, জীবন বিমা খাতে তিন দশমিক সাত শতাংশ, প্রকৌশল খাতে তিন দশমিক এক শতাংশ ও জ্বালানি খাতে তিন দশমিক এক শতাংশ মুনাফা দেখতে পান।

আলোচিত সপ্তাহে ব্যাংক, সেবা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের বিনিয়োগকারীরা আগের সপ্তাহের চেয়ে লোকসান দেখতে পান। এর মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারদর পতনকে বিনিয়োগকারীরা সাময়িক দর সংশোধন হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, আগের সপ্তাহের চেয়ে এসব খাতের শেয়ারের দর পতন এক শতাংশের নিচে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।

লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, একক কোম্পানি হিসেবে ডিএসইতে লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে বেক্সিমকো ফার্মা ও বেক্সিমকো লিমিটেড। এছাড়া গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ওষুধ খাতের কোম্পানি। এ সময়ে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ ২১ দশমিক তিন শতাংশ অবদান রাখে। আলোচিত সময়ে অন্যান্য খাত ১১ দশমিক তিন শতাংশ, ব্যাংক ৯ দশমিক এক শতাংশ, সাধারণ বিমা খাত আট দশমিক সাত শতাংশ, প্রকৌশল খাত আট দশমিক ছয় শতাংশ ও বস্ত্র খাত আট শতাংশ অবদান রাখে।

একক কোম্পানি হিসেবে শেয়ারদর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। গত সপ্তাহে এর শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৩১ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এরপরই রয়েছে

সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, দেশ গার্মেন্টস, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ০১ ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড।

অপরদিকে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স। গত সপ্তাহে কোম্পানিটি শেয়ারদর হারায় আগের ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ফার্স্ট ফিন্যান্স, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফ্যামিলি টেক্স (বিডি), ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস, তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, আইএফআইসি ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০