Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:17 pm

মিশ্র ফলদ বাগানে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে অনাবাদি জমিতে মিশ্র ফলদ বাগান করার আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের মাঝে। বিশেষ করে ত্রিশাল, মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এসব ফলদ বাগান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় গ্রামে গ্রামে বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছেন চাষিরা। তবে গ্রামীণ রাস্তার বেহাল অবস্থায় বাগানের ফসল সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারায় এক ধরনের হতাশা রয়েছে কৃষকের। ফলদ বাগানে কৃষককে আগ্রহী করে তুলতে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের কৈতরবাড়ি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম ১৯ বছর মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে ফলের বাগানে কাজ করেছেন। দেশে ফিরে সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৪ সালে পাঁচ একর পৈতৃক জমিতে ফলদ বাগান শুরু করেন তিনি। বাগানে এখন প্রায় ২০ ধরনের ফলদ গাছ রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেক বেকারের।
বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৯৪ সালে জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমাই। ১৯ বছর সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় ফলের বাগানে কাজ করি। দেশে ফিরে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বাগান করার উদ্যোগ নিই। বর্তমানে আমার বাগানের গাছগুলোয় ফল ধরছে। তা থেকে প্রতি মাসে আয়ও হচ্ছে। বাগানে রয়েছে লেবু, মাল্টা, কলা, আমড়া, পেঁপে, অড়বড়–ই, আমলকী, লিচু ও আমসহ ২০ ধরনের ফলদ গাছ। তবে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে ফসল ঠিকমত বাজারজাত করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। রাস্তাঘাট মেরামত করার পাশাপাশি বিনা সুদে সরকারের প্রতি ঋণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাগান রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত দুজন শ্রমিক জানান, আমরা একসময় বেকার ছিলাম। এখন রফিকুল ইসলাম ভাইয়ের বাগানে কাজ করে প্রায় ১৪ জন সংসার চালাচ্ছি। তবে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে আমাদের পরিশ্রম বেশি হয়। তাই সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, দ্রুত যেন রাস্তাঘাট মেরামত করে দেওয়া হয়।
রফিকুল ইসলামের বাগান দেখে এলাকার অনেকেই আগ্রহী হয়ে ফলদ বাগান শুরু করেছেন। প্রতিবেশী দুজন বাগানচাষি বলেন, এক সময় তার বাগান করা দেখে আমরা
হাসি-মসকরা করতাম। পরে তার কাছ থেকে বিভিন্ন ফলের চারা নিয়ে বাগান করা শুরু করেছি। আমাদের বাগানে ফলও ধরেছে।
মোক্ষপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অনাবাদি জমিতে ফলদ বাগান করে রফিকুল ইসলামের মতো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে রাস্তাঘাট খারাপ থাকায় কৃষক তাদের ফসল সময়মতো বাজারজাত করতে পারছেন না। রাস্তাঘাট ঠিক হলে এ এলাকার কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতেন।
ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলীপ কুমার পাল বলেন, এক সময় এ এলাকার মানুষ অনাবাদি জমিতে কিছুই করতে সাহস পেত না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের ফলদ বাগান করার জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে কৃষক বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার কথাও তিনি বলেন। এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, মিশ্র প্রক্রিয়ায় বাগান করা হলে সুবিধা বেশি। এতে বিভিন্ন ধরনের ফলদ গাছ থাকায় প্রায় সারা বছরই বাগানে কোনো না কোনো ফল থাকে। আধুনিক পদ্ধতিতে ফল চাষে লাভও অনেক বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অনাবাদি জমিতে ১০টির মতো ফলদ বাগানে কাজ করে প্রায় ২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। মুক্তাগাছা উপজেলার ১নং দুল্লা, ৭নং ঘোগা, ৮নং দাওগাঁও ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে বহু ফলদ বাগান। এসব বাগানে প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো ফল পাওয়া যায়। দুল্লা গ্রামের ফরহাদ হোসেন জানান, বাগানে আম, লিচু, পেঁপে, জলপাই, বড়ই, লটকনসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছি। মুক্তাগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারগিস আক্তার জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো মিশ্র ফলদ বাগান গড়ে তুলেছেন চাষিরা। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন। এতে কৃষকদের নির্ধারিত কোনো ফসলের দিকে চেয়ে থাকতে হয় না। প্রায় সারা বছরই আয় হতে থাকে। ফুলবাড়িয়া ও সদর উপজেলায়ও কৃষক এ ধরনের ফলদ বাগান করছেন বলে জানান ময়মনসিংহ খামার বাড়ির কৃষি কর্মকর্তারা।

এম. ইদ্রিছ আলী